আসছে ঝড়ের মৌসুম, সাতক্ষীরা উপকূলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নিয়ে আতঙ্ক
আপলোড সময় :
১৩-০৩-২০২৪ ১০:৪৫:২৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
১৩-০৩-২০২৪ ১০:৪৫:২৯ পূর্বাহ্ন
সংগৃহীত
আর কিছুদিন পরই আসছে বৈশাখ মাস। বৈশাখের ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনলেই সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরার মানুষ আঁতকে ওঠেন। ঝড়-বৃষ্টিতে নদীর পানি বাড়লেই বাঁধ ভেঙে প্লাবনের শঙ্কা তৈরি হয়। ঝুঁকিতে রয়েছে উপকূল জুড়ে থাকা অধিকাংশ বেড়িবাঁধ।
বিশেষ করে গাবুরা ইউনিয়নের গাবুরা-২, গাবুরা-৩ ও লেবুবুনিয়া পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে বর্তমানে সেখানে বাঁধ নির্মাণসহ ১ হাজার ২০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্প শেষ হলে ২৯ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পাউবোর তথ্যনুযায়ী সাতক্ষীরা অঞ্চলে ৬৭৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। তার মধ্যে বর্তমানে ১৩ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। অনেক এলাকায় বাঁধ কমবেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ষাটের দশকে মাটি দিয়ে তৈরি ঐ বেড়িবাঁধ ছিল ১৪ ফুট উঁচু ও ১৪ ফুট চওড়া ও প্রায় ৬০ ফুট তলা। কিন্তু প্রায় ৭০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও চওড়ার অর্ধেকও এখন অবশিষ্ট নেই। অর্থাভাবে দীর্ঘদিনেও প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্কার করতে না পারায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
ষাটের দশকে তৈরি ঐ বেড়িবাঁধের বেশিরভাগই দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে বাঁধগুলো ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস এবং নিম্নচাপ, লঘুচাপ, আমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে লোকালয়ে পানি ঢোকা ঠেকাতে পারছে না। ফলে সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনির কয়েক লাখ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, চারপাশে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদী দ্বারা বেষ্টিত তার ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের গাবুরা, নাপিতখালী, জেলেখালী, তিন নম্বর পোল্ডারসহ বিভিন্ন এলাকায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সাগরে নিম্নচাপের প্রভাব হলে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। জোয়ারের সময় বাঁধের কানায় কানায় পানি ওঠে। বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। তবে এখানে মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে অত্র এলাকার হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে।
এছাড়া আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া ও আশাশুনি সদরের বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া ও চুনা নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ার কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলবাসী। মুন্সীগঞ্জ এলাকার বিপ্লব হোসেন জানান, উপকূলের বিভিন্ন জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ ঝড়-বৃষ্টিতে উপকূলে কিছু না কিছু প্রভাব পড়েই।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানান, পাউবো-১ এর আওতায় ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৭ কিলোমিটার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চারিদিকে নদী দ্বারা বেষ্টিত গাবুরা ইউনিয়নের মানুষের বাঁধভাঙন থেকে রক্ষা করতে স্থায়ী টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মাণ, খাল খনন, স্লুইসগেট নির্মাণসহ নানা কাজের জন্য সরকারিভাবে ১ হাজার ২০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে কাজের ২০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
এই প্রকল্প শেষ হলে ২৯ কিলোমিটার বাঁধ পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হবে। বড় ধরনের দুর্যোগ না এলে বাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বলেন, পাউবো-২ এর আওতাধীন বেড়িবাঁধগুলোর ভেতরে ২৯৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে পাঁচ/ছয় কিলোমিটর অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত না হানলে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।
কাজের তদারকিতে থাকা সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গাবুরার অসহায় ও নিরীহ মানুষের কথা চিন্তা করে সরকার ১ হাজার ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ পুনর্বাসন প্রকল্প’ নামের একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
প্রায় ৪০ টি প্যাকেজে উক্ত কাজ চলমান রয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, উপকূলীয় শ্যামনগরের গাবুরায় বাঁধ নির্মাণসহ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। উক্ত কাজ সম্পন্ন হলে সুফল ভোগ করবে এলাকার জনগোষ্ঠী।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Monir Hossain
কমেন্ট বক্স