রামগঞ্জ (
লক্ষ্মীপুর)
প্রতিনিধি:-
রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম জুয়েলের বিরুদ্ধে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভোলাকোট ইউনিয়নের ভোলাকোট - বিষ্ণুপুর গ্রামের মাঠে শতশত কৃষকের প্রায় ১৬ একর কৃষিজমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে।
বছরের পর বছরধরে ওই জমিতে মৎস্য ঘের করে কোটি টাকার সম্পদ মালিক হয়েছেন জাহিদ।
বছরের পর বছর যাবত জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কাছে জুয়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বহু কৃষক নির্যাতণ শিকার হয়েছে।
শুক্র বার কৃষকদের মানববন্ধন, জেলাপ্রশাসক লক্ষ্মীপুর কাছে স্মারকলিপি, দেওয়ানী আদালত ও দুদক কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
শুক্রবার সকালে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা সারমিন ইসলাম, সহকারী কমিশনার ভূমি মনিরা খাতুন তিনটি ভেকু নিয়ে কৃষকদের ১৬ একর জমি দখলমুক্ত করেছেন। ওই সময়ে পুলিশ প্রশাসন,ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন কৃষকসহ স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
কৃষক আবদুল আজিজ, মাওলানা গোলাম রসূল, আরিফ হোসেন, শাকিল মাহমুদ, জাহাঙ্গীর ভূইয়া, রুহুল আমিন, আবদুল কাদের, কবির হোসেন, ফরিদ হোসেন, জসিম উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, জাহিদ হাসান ও নয়ন হোসেন জানিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক, রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি)র কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
এ ঘটনায় উক্ত কৃষি জমির মালিক আরিফ হোসেনসহ ভুক্তভোগীরা দুইটি নন জিআর ও ৩টি সিআর মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানী শেষে রামগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরা খাতুনের নেতৃত্বে শুক্রবার উক্ত কৃষি জমির চারপাশের বাঁধ ভেকু মেশিন দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়।
ভুক্তভোগি আবদুল কাদের, আবদুল আজিজ, নুরজাহান বেগম, রেহানা বেগম ও আরিফ হোসেন জানান, ২০১৮ ইং সন থেকে জাহিদুল ইসলাম জুয়েল প্রভাব বিস্তার করে একটি মহলের ইন্ধনে ও সহযোগিতায় স্থানীয় গ্রামবাসীর মালিকানাধীন কৃষি জমি জবরদখল শুরু করেন। জোরপূর্বক জমির মালিকদের জিম্মি করে জমিতে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি বিক্রি অব্যাহত রাখেন।
ধীরে ধীরে তিনি উক্ত মাঠের প্রায় ১৬ একর কৃষি জমি দখল করে চারপাশে বিশালাকৃতির বাঁধ নির্মান করে মাছের ঘের, কলা ও লেবুর বাগান সৃজন করেন। এছাড়া উক্ত কৃষি জমির মাটি উত্তোলন করে স্থানীয় ব্রীকফিল্ডে বিক্রি করে দেন।
এসময় বাঁধা দিতে গিয়ে যুবলীগের সাবেক এই নেতার হাত মারধরের শিকার হয়েছেন কয়েকজন জমির মালিক। স্থানীয় এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করে বলেন, জাহিদুল ইসলাম জুয়েল আমাদের জমি জোরপূর্বক জবরদখল করে মাদকের মামলা জেলখানা প্রেরণ করেছেন।
তার পালিত সন্ত্রাসী ও মাদকসেবীদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি।
উক্ত জমির মালিক আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা ও জমির মালিকদের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা দায়ের করেন জাহিদুল ইসলাম জুয়েল।
জাহিদুল ইসলাম জুয়েল নলচরা গ্রামের রুহুল আমিনের ৪৭ শতক জমি দখল করে ১০ লাখ টাকা চাঁদাদাবি মামলায় বর্তমানে জেলা কারাগারে আটক থাকায় এ ঘটনায় তার কোন বক্তব্য নেয়া যায়নি।
রামগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরা খাতুন জানান, আমরা বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার জাহিদুল ইসলাম জুয়েলকে নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তিনি আসেননি। একবার আসলেও তিনি দখলকৃত জমির স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
তাছাড়া বিভিন্ন অভিযোগের আলোকে সরেজমিনে তদন্ত ও দীর্ঘ শুনানি শেষে পুলিশ প্রশাসন ইউপি সদস্য ও স্থানীয় তহশিলদারের সহযোগিতায় জমিগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করতে বাঁধ অপসারনসহ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ শারমিন ইসলাম জানান, সহকারী কমিশনার (ভূমি), কৃষি কর্মকর্তাসহ জমির প্রকৃত মালিকদের সাথে কথা বলেছি। সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পাই অনেক ফসলি জমি ইতোমধ্যে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
জমিগুলো উদ্ধার ও প্রকৃত মালিকদের কাছে হস্তান্তর করতে আজ ইউপি সদস্য, তহশিলদারের সহযোগিতায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও চারপাশের বাঁধ অপসারন করা হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Monir Hossain