ঢাকা , শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

নিমতলী ট্র্যাজেডির ১৪ বছর

পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেওয়া হয়নি

আপলোড সময় : ০৩-০৬-২০২৪ ১০:১০:০৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ০৩-০৬-২০২৪ ০৭:৪৬:২৬ অপরাহ্ন
পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেওয়া হয়নি সংগৃহীত
২০১০ সালের ৩ জুন রাজধানীর চানখাঁরপুলের নিমতলীতে কেমিক্যাল বিস্ফোরণে অঙ্গার হয়ে মারা যান ১২৪ জন। আহত হন অর্ধশতাধিক। ১৪ বছর আগে ঘটে যাওয়া বহুল আলোচিত এ ঘটনায় কাউকে দোষী করা যায়নি। শনাক্তই করা যায়নি ঐ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির জন্য দায়ী কারা। ঐ ঘটনায় নিয়মিত মামলা দায়ের না হওয়ায় দায়ীদের বিচারের বিষয়টি আড়ালেই থেকে গেছে। নিমতলীর ঘটনার পর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারি নানা নির্দেশনা জারি হলেও তা কার্যকর হয়নি এখন পর্যন্ত।

সেই বিভীষিকাময় বাড়ি :৪৩ নবাব কাটারা, নিমতলীর সেই ৫ম তলা বাড়িটিতে আগুনে পোড়ার কোনো দৃশ্য নেই। ২০১০ সালের ৩ জুন বাড়ির নিচে কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লেগে বিস্ফোরিত হয়ে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রুনার বিয়ের ‘পানচিনি’ অনুষ্ঠানের দিন এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের পর পরিবার-পরিজন হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া রুনা, রত্না ও শান্তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুকে টেনে নেন। নিজের সন্তান পরিচয় দিয়ে ঘোষণা দেন তারা তার নিজের সন্তান। এরপরই গণভবনে নিজে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী তার তিন কন্যার বিয়ে দেন। নিমতলীর সেই ট্র্যাজেডির ১৪ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর তিন কন্যার একটাই দাবি, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউনগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়। 

নিচতলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত পুরো বাড়িটি এই ১৪ বছরে অনেক পালটে গেছে। বাড়ির তিন তলায় দিদার, চতুর্থ তলায় ফারুক আহমেদ ও ৫ম তলায় গুলজার বসবাস করেন। তবে এই তিন ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানরা নিমতলীর ট্র্যাজেডিতে নিহত হয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডে গুলজারের স্ত্রী ইয়াসমিন গুলজার ও দুই ছেলে ইসতিয়াক গুলজার ও ইমতিয়াজ গুলজার, তার মা সাবেরা বেগম, চাচি মনোয়ারা বেগম, মেজো ভাইয়ের স্ত্রী শিল্পী, তার দুই ছেলে ইমরান ও আদৃতা, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রানী, তার দুই মেয়ে—আনিকা ও অংকিতা নিহত হন।

নিমতলীর ৫৫ নম্বর বাড়িতে দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন মুন্নি বেগম, তার মেয়ে লাভলী ও লাভলীর ছেলে ১০ মাস বয়সী লাবীব। ঐ বাসাতেই মারা যান মুন্নির বোন রমিজা বেগম, রমিজার ছেলের স্ত্রী মনোয়ারা ও মনোয়ারার ১৫ বছর বয়সি ছেলে পুচি। ঐ দিন বাসা থেকে প্রাণ নিয়ে বের হতে পেরেছিলেন মুন্নির দুই ছেলে—রিপন ও স্বপন। রিপন বলেন, আগুনে শুধু তার মা, বোন, ভাগনেসহ পরিবারের ছয় সদস্যকেই হারাননি, সঙ্গে পুড়ে যাওয়া বাড়িটিও হারিয়েছেন। আগে থেকেই বাড়ি নিয়ে ঝামেলা চলায় আগুন লাগার পর স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি পোড়া বাড়িটিই দখল করে নেন। এখন তারা দুই ভাই পথে পথে ঘুরছেন।

নিমতলী ট্র্যাজেডির পর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদের আন্দোলনে নামে এলাকাবাসী। ঐ ঘটনার পর কিছু সময়ের জন্য প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। পরে গোডাউন উচ্ছেদ অভিযান থেমে যায়। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় কেমিক্যাল গোডাউনে বিস্ফোরণে ৭১ জন নিহত হয়। ঐ ঘটনার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদে অভিযান চালায়। মাত্র ৩৩ দিন অভিযান পরিচালনা করে ১৭০টি কেমিক্যাল গোডাউন সিলগালা করা হয়। এরপর অদৃশ্য কারণে সেই অভিযান থেমে যায়। এখনো পুরান ঢাকায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্ত আড়াই হাজার কেমিক্যাল গোডাউনের মধ্যে লাখ লাখ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। যে কোনো সময়ে নিমতলী ট্র্যাজেডি বা চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির মতো আরো একটি ট্র্যাজেডি ঘটে যেতে পারে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Monir Hossain

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ