ঢাকা , শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

ছাত্র রাজনীতি সমস্যা ও সমাধান

আপলোড সময় : ২৩-০৯-২০২৪ ১২:৩৬:৫৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৩-০৯-২০২৪ ০৫:৪৪:৪৪ অপরাহ্ন
ছাত্র রাজনীতি সমস্যা ও সমাধান লেখক ও বিশ্লেষক: ইসমাইল হোসেন

ছাত্র ও রাজনীতি
-----------------------(নিসিদ্ধ না সমাধান,উপায় কি?) 
ফ্যাক্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মানেই একজন শিক্ষার্থী মেধাবী, এমন ধারণা আমাদের সমাজে বেশ প্রচলিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে অত্যন্ত নিম্নস্তরে। বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এই পার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। উন্নত বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধা যাচাইয়ের জন্য নানা ধরনের মূল্যায়ন পদ্ধতি ও টুলস ব্যবহার করে, যেখানে শুধু মুখস্থ বিদ্যা নির্ভরতা নয়, বরং সৃজনশীলতা, সমস্যার সমাধানের ক্ষমতা এবং গবেষণার দক্ষতার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়।
 
এর বিপরীতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শিতা বেশিরভাগ সময় প্রধান ভূমিকা পালন করে। ভর্তি পরীক্ষার কাঠামো এমন যে, মূলত তথ্য মুখস্থ করে তা সঠিকভাবে পুনরায় উপস্থাপন করতে পারলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভর্তি হওয়া সম্ভব। মেধার পরিপূর্ণ যাচাইয়ের অভাব এখানকার শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার কারণে ছাত্ররা একটি অতিরিক্ত আত্মতুষ্টি অনুভব করে, যেটা এক ধরনের অলসতার জন্ম দেয়। এটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক অগ্রগতি না হওয়ার অন্যতম কারণ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা গড়ে তোলার পরিবর্তে এই একাডেমিক পরিবেশ তাদের পুরনো ধাঁচের পড়ালেখায় সীমাবদ্ধ করে রাখে।
 
বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নতি ও শিক্ষার্থীদের মেধা আরও সঠিকভাবে যাচাই করতে হলে, প্রথাগত মুখস্থ নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে সৃজনশীলতা, গবেষণা এবং বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য আন্তর্জাতিক মানের মূল্যায়ন পদ্ধতি ও টুলস প্রবর্তন করা একান্ত জরুরি।
 
 
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি চালু থাকবে কি থাকবে না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হলে আমাদের আগে ছাত্র রাজনীতির ভালো ও খারাপ দিকগুলো গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে। এটি একটি জটিল বিষয়, যেটি হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো নয়। ছাত্র রাজনীতির অব্যাহত থাকলে যেমন কিছু ভালো ফল হতে পারে, তেমনই বন্ধ হয়ে গেলে কিছু আশঙ্কাও রয়েছে। তাই আগে এর ভালো ও মন্দ দিকগুলোর বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
 
 
 
ছাত্র রাজনীতির ভালো দিকগুলো:
গণতন্ত্রের চর্চা: ছাত্র রাজনীতি তরুণদের গণতন্ত্রের মৌলিক বিষয়গুলো শিখতে সাহায্য করে। এটি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের গুণাবলি, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, এবং অন্যের মতামত সম্মান করার মানসিকতা গড়ে তোলে।
সমাজ সচেতনতা: ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইস্যুগুলো সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং তাদের এই ইস্যুগুলোতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়।
সামাজিক পরিবর্তনের চাবিকাঠি: ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে, বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের সময়, ছাত্র রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্র আন্দোলনই অনেক সময় সমাজ ও রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
ছাত্র রাজনীতির খারাপ দিকগুলো:
 
সহিংসতা ও দলাদলি: বর্তমান প্রেক্ষাপটে, ছাত্র রাজনীতিতে সহিংসতা এবং রাজনৈতিক দলাদলি অত্যন্ত প্রকট। এটি শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে শত্রুতা ও বিভেদ সৃষ্টি করে।
 
রাজনৈতিক প্রভাব: ছাত্র রাজনীতিতে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে। শিক্ষার চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয় অনেককে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিতে পারে।
শিক্ষার ক্ষতি: ছাত্র রাজনীতি অনেক সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি করে। রাজনৈতিক কর্মসূচি, হরতাল, এবং সংঘর্ষের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।
ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলে যা হতে পারে:
 
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ: শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে পারবে এবং সহিংসতা বা সংঘর্ষের ঝুঁকি কমবে।
লিডারশিপের অভাব: ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে ওঠার সুযোগ কমে যেতে পারে।
 
সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা:
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ছাত্র রাজনীতি যেভাবে চলছে, সেভাবে চলতে দেওয়া বা একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্তই উপযুক্ত নয়। এর পরিবর্তে এর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার পরিবর্তে, এটিকে আরও স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল, এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণের দিকে মনোনিবেশ করা জরুরি।
 
কিছু প্রস্তাবিত সংস্কার:রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ কমানো: ছাত্র সংগঠনগুলোকে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা আগে ছাত্র, পরে কোনো রাজনৈতিক দলের অংশ। তাদের মূল লক্ষ্য হবে শিক্ষার উন্নতি ও সহপাঠীদের স্বার্থ রক্ষা করা।
আলোচনা ও বিতর্কের সংস্কৃতি চালু করা: সহিংসতার পরিবর্তে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যুক্তি ও আলোচনার মাধ্যমে মতামত প্রকাশের চর্চা চালু করা উচিত।
লিডারশিপ ট্রেনিং: ছাত্র রাজনীতিকে নেতিবাচক রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রেখে তরুণদের জন্য নেতৃত্বের দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।
শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা: ছাত্র রাজনীতির যেকোনো কার্যক্রমে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না করার জন্য কঠোর নিয়মাবলি প্রয়োগ করা উচিত।
 
আমাদের উচিত উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ছাত্র রাজনীতির প্যাটার্ন অনুসরণ করা, যেখানে রাজনীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সঠিক নেতৃত্ব গুণাবলি এবং রাজনৈতিক সচেতনতা অর্জন করতে পারে।
 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যদি ও কথাটা ঠিক বলেন নাই। 
'মূর্খর দেশে আবার কিসের বিশ্ববিদ্যালয়'এখন বাস্তবতাটা এমন মনে হচ্ছে। 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Monir Hossain

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ