ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে যে কারণে
ভয়েস প্রতিদিন ডেস্ক
আপলোড সময় :
০২-১০-২০২৪ ০৬:১১:৩০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০২-১০-২০২৪ ০৬:১১:৩০ অপরাহ্ন
বিশ্বের সব দেশেই দিন দিন বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। এক সময় অনেকেরই ধারণা ছিল যে, শুধু বয়স্কদেরই হয় ডায়াবেটিস। অথবা যাদের বংশে কারও ডায়াবেটিস আছে, তারাই পরবর্তী সময়ে এ রোগে আক্রান্ত হন। তবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এখন কমবয়সীদের মধ্যেও বাড়ছে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা।
বেকারত্ব, লেখাপড়ার চাপ, বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেশি, অতিরিক্ত দুঃখ, দুশিন্তা, হতাশা থেকে কমবয়সীদের মধ্যে বাড়ছে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। একই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা, নিয়মিত হাঁটা-চলা না করা কিংবা জাঙ্ক ফুডের প্রতি নির্ভরশীলতার কারণেও বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগী সংখ্যা।
সেই সঙ্গে অতিমাত্রায় কাজের চাপ আর দুশ্চিন্তা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে একজন মানুষের অধিকাংশ সময়ে বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেড়ে যায়। আরদিনের পর দিন এই ধরণের জীবন যাপনের জন্য অনেকেই ডায়াবেটিসে আক্তান্ত হচ্ছেন।
ডায়াবেটিস মানে হলো রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়া। এমনিতেই আমাদের রক্তে বেশ কিছু উপাদান থাকে যেমন- নির্দিষ্ট পরিমাণে বিলিরুবিন, হিমোগ্লোবিন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়ামসহ বহুবিধ উপাদান আছে। সেগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকতে হয়। যখনই রক্তের কোনো উপাদান অতি মাত্রায় বেড়ে বা কমে যায়, তখনই শুরু হয় সমস্যা।
ডায়াবেটিস হলে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস হলো হরমোনজনিত অসুখ, তাই বংশে কারও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের জন্য ডায়াবেটিস হতে পারে। বা রক্তের কারো ডায়াবেটিস না থাকলেও ডায়াবেটিস হয়।
আবার যে মানুষটির ডায়াবেটিস নেই, তিনি মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে রক্তে চিনির মাত্রা বাড়বে না। তবে যিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি চিনি বা অতিমাত্রায় মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে সেই ব্যক্তির রক্তে চিনির মাত্রা বাড়বে।
আরও পড়ুন
বয়সের আগেই বুড়িয়ে যাচ্ছেন? বুঝবেন যে লক্ষণে
কমবয়সীদেরও হতে পারে মস্তিষ্কের ব্যাধি 'পারকিনসন্স', জানুন লক্ষণ
ডায়াবেটিস হলো- হরমোনজনিত অসুখ। হরমোন হলো- রক্তের জরুরি উপাদান। আমাদের দেহে ইনসুলিন নামে এক ধরনের জরুরি উপাদান আছে। ইনসুলিন হরমোন যখন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না বা দেহে ইনসুলিন হরমোন তৈরি হয় না, তখন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।
ডায়াবেটিসের আছে কয়েকটি ধরন। দেহে যখন ইনসুলিন হরমোন তৈরি হতে পারে না, তখন শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতির জন্য টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস হয়। আর ইনসুলিন হরমোন যখন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখন দেখা যায় টাইপ ২ ডায়াবেটিস। যাকে বলা হয় মাতৃত্বজনিত ডায়াবেটিস বা প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস। গর্ভাবস্থায় অনেকেরই এ ডায়াবেটিস হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায়
খাবার নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম ও ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি যদি রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, তাহলে তিনি নন ডায়াবেটিক একজন মানুষের মতোই পরিশ্রম করতে পারবেন।
আর যদি রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রনে না থাকে, তাহলে ডায়াবেটিস দেহের বিভিন্ন অঙ্গের উপর ফেলবে নেতিবাচক প্রভাব। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস হলে, বেড়ে যাওয়া চিনিসহ রক্ত সারাদেহে পৌঁছে যায়। তখন কিডনি, লিভার, হার্ট রক্তনালিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন ধরনের অসুখ তৈরি হয়। এক অসুখ থেকে সৃষ্টি হয় আরেক অসুখ।
এজন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে অবহেলার পরিবর্তে নিয়মিত রক্তের চিনির মাত্রা মাপতে হবে। জীবনযাপন পদ্ধতিতে শৃঙ্খলা আনতে হবে। চিকিৎসকরা রোগীকে ওষুধ বা ইনসুলিন ইনজেকশন দেন রক্তে শর্করার মাত্রা যাচাই করে। এই দু’ধরণের পরিস্থিতিতেই নিয়মিত রক্তের চিনির মাত্রা মাপতে হবে।
লেখক: মেডিকেল অফিসার, গাইনী অবস এন্ড ইনফারটিলিটি ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ স্পেশালইজড হসপিটাল, ঢাকা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Iqbal Hasan
কমেন্ট বক্স