ঢাকা , শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

সাড়ে ১১ লাখ টাকার কাজুবাদাম বিক্রি করেছেন অরুনা

ভয়েস প্রতিদিন ডেস্ক
আপলোড সময় : ০৯-১১-২০২৪ ১২:০৬:৩২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৯-১১-২০২৪ ১২:০৬:৩২ অপরাহ্ন
সাড়ে ১১ লাখ টাকার কাজুবাদাম বিক্রি করেছেন অরুনা
শিরীন সুলতানা অরুনা রাঙ্গামাটির মেয়ে। পরিশ্রম, উদ্ভাবনী চিন্তা আর আত্মবিশ্বাসের মিশেলে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। যিনি ছোট পরিসরে হাতের তৈরি ক্রিস্টাল ব্যাগ তৈরি দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সামাজিক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে একসময় গড়ে তোলেন নিজের প্রতিষ্ঠান। পরে কাজ শুরু করেন পার্বত্য অঞ্চলের কাজুবাদাম এবং স্থানীয় পণ্য নিয়ে। যা অনলাইনে ব্যাপক সফলতা পায়।

অরুনা শুধু অনলাইনেই স্থানীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজুবাদাম বিক্রি করেছেন প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকার। বর্তমানে তার অধীনে কাজ করছেন ২০ জন নারী-পুরুষ। তার এই চমকপ্রদ সাফল্য ও সাহসী পথচলার গল্প নিয়ে কথা হয় জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—

শিরীন সুলতানা অরুনা: ২০০৮ সালে ৫৯৫ টাকার ক্রিস্টাল কিনেছিলাম ব্যাগ বানানোর জন্য। সাংসারিক কাজের পর যেটুকু অবসর ছিল, সেই সময়টুকু ব্যাগ বানাতাম। তখন রং-বেরঙের পুথি এবং ক্রিস্টালের ব্যাগ বেশ জনপ্রিয় ছিল। আমি যখন বাচ্চার স্কুলে যেতাম; তখন হাতে করে নিয়ে যেতাম ব্যাগগুলো। সবাই বেশ পছন্দ করতেন। কারণ হাতের তৈরি ব্যাগ এবং বিভিন্ন সুন্দর শেপের ছিল। এর মধ্যে ব্যাগগুলো এত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, আমার একার হাতে তৈরি করে সরবরাহ করতে বেশ মুশকিল হতো। তাই পরে ১০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাসায় এনে কাজ করাই। পরে ব্যাগের সাথে গলার, কানের এবং হাতের জুয়েলারি তৈরি করা শুরু করি। দেখলাম জুয়েলারিগুলো সবাই খুব পছন্দ করা শুরু করলো। তখন প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার টাকার মতো বিক্রি করি।

শিরীন সুলতানা অরুনা: সে সময় কিছুটা বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলাম। অনেকেই কটূক্তি করতেন। পেছনে অনেকেই বলতেন, ওই ব্যাগওয়ালি যায়। এতে মোটেও কষ্ট পেতাম না। কারণ আমি জানতাম, ভালোভাবে কাজ করে গেলে একদিন সফলতা আসবেই। কাজ করতে গিয়ে মানুষের অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছি। যখন কাপড় বিক্রি করতাম; তখন অনেকেই সামনাসামনি কিছু না বললেও পেছন থেকে বলতেন, ওই দেখ কাপড়ওয়ালি। মাঝেমধ্যে খারাপ লাগতো। তবে এসব কথায় আমি দমে যাইনি। ধৈর্য ধরেছি আর অপেক্ষা করেছি সুসময়ের।

শিরীন সুলতানা অরুনা: দেখলাম অনেকেই ব্যাগগুলো নিয়ে কাজ শুরু করলেন। তখন আমি চিন্তা করলাম, নতুন কিছু করতে হবে। সেই চিন্তা থেকে একদিন ৪ হাজার ৯০০ টাকার কাপড় কিনে ফেললাম। কাপড় কিনে খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। কাপড়গুলো বিক্রি হবে কি না, তা নিয়ে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলাম। তখন পরিবার থেকে বেশ সাপোর্ট পাই। আমার স্বামী বলেন, ‘যদি কাপড় বিক্রি না হয় তাহলে তুমি নিজে ব্যবহার করে ফেলো। তবুও টেনশন করো না।’ কিছুদিনের মধ্যেই আমার কাপড়গুলো বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। পরে ২০১২ সালে একটা শোরুম নিই। ‘এসএস হ্যান্ডিক্রাফটস’ নামে শোরুম নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। তখনো আশেপাশের অনেকে কটূক্তি করেছে। এমনও অনেকে বলেছেন, ‘মেয়ে মানুষ আবার শোরুম চালাবে।’ আমি কখনো দমে যাইনি এসব কথায়। সব সময় নিজেকে শক্ত রেখেছি। একসময় যারা আমাকে কটূক্তি করতেন; তারাই আবার আমার সফলতা দেখে প্রশংসা করতে শুরু করেন।

শিরীন সুলতানা অরুনা: আমার এসএস হ্যান্ডিক্রাফটসের যাত্রা শুরু ২০০৬ থেকে। তখন থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনাকালীন শোরুম বন্ধ হয়ে যায়। তখন চিন্তা করলাম, এই সময়ে পার্বত্য এলাকায় উৎপাদিত পণ্য নিয়ে কাজ করার। তারপর যাত্রা শুরু করি দেশীয় কাজুবাদাম নিয়ে। যদিও অনেকদিন আগে থেকেই চিন্তা ছিলো কৃষিপণ্য নিয়ে কাজ করার।

শিরীন সুলতানা অরুনা: করোনাকালীন যখন কাজুবাদাম নিয়ে কাজ শুরু করি; তখন অনেকেই বিশ্বাস করতে চাননি যে, আমাদের দেশেও কাজুবাদাম উৎপাদন হয়। সেজন্য কাজুবাদাম বাগানে গিয়ে গাছে কাজুবাদামসহ ছবি তুলে এবং ভিডিও করে পোস্ট করতে থাকি। এতে মানুষের আগ্রহ জন্মায় এবং অর্ডার করেন।

শিরীন সুলতানা অরুনা: প্রথম প্রথম লোকজন বিশ্বাসই করতো না যে, আমাদের দেশে কাজুবাদাম উৎপাদন হয়। তাদের ধারণা পাল্টানো বা বুঝানোটাই ছিল চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া এলাকায় কাজুবাদাম প্যাকেজিং করার ম্যাটারিয়াল পাওয়া যেতো না। তবে চ্যালেঞ্জের চেয়ে আত্মবিশ্বাস ছিল বেশি।

শিরীন সুলতানা অরুনা: সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল কুরিয়ার সার্ভিস। অনেক কাস্টমারই পণ্য হোম ডেলিভারি চাইতেন। কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিসগুলো তখন হোম ডেলিভারি দিতে চাইতো না। এ ছাড়া তেমন সমস্যা ছিল না।

শিরীন সুলতানা অরুনা: পার্বত্য এলাকায় উৎপন্ন বিন্নি ধানের চাল (লাল, কালো, সাদা) নিয়ে কাজ করছি। এ ছাড়া পাহাড়ি এলাকার তেঁতুল, মসলা ইত্যাদি আছে। তবে আমার এসএস হ্যান্ডিক্রাফটস নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে আরও বেশকিছু হাতের কাজের আইটেম আছে।

শিরীন সুলতানা অরুনা: সব সময় পাশে থেকে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা এবং সাহস জুগিয়েছেন আমার স্বামী। তিনি সব সময় আমাকে সাপোর্ট করেন। আমার কাজে সাহায্য করেন।

শিরীন সুলতানা অরুনা: এরই মধ্যে কাজুবাদামের প্রায় ১২টি রেসিপি তৈরি করেছি। আরও তৈরি করার চেষ্টা করছি। এসব রেসিপি নিয়ে একটা কাজুবাদাম রেসিপি বই প্রকাশ করার পরিকল্পনা আছে। যেন মানুষ এই কাজুবাদাম ও রেসিপি সম্পর্কে জানতে পারেন। এ ছাড়া কাজুবাদামের একটি নারীবান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠা করা। কাজুবাদামের বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে গবেষণা এবং তা ব্যবহারের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছাতে কাজ করে যাবো।

শিরীন সুলতানা অরুনা: তরুণ উদ্যোক্তাদের বলবো, কী নিয়ে কাজ করবেন প্রথমেই তা শনাক্ত করুন। যে কোনো একটি বিষয়ে ফোকাস করুন এবং সেই বিষয়ে পড়াশোনা করুন, জানুন। তারপর কাজ শুরু করুন। পরিশ্রম আর কাজের প্রতি একনিষ্ঠ থাকলে সফল হবেন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Iqbal Hasan

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ