ঢাকা , শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

শরীর ও মনের আনন্দের জন্য সাইক্লিং

ভয়েস প্রতিদিন ডেস্ক
আপলোড সময় : ১১-১১-২০২৪ ১০:৩৮:৩৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১১-১১-২০২৪ ১০:৩৮:৩৯ অপরাহ্ন
শরীর ও মনের আনন্দের জন্য সাইক্লিং ছবি:সংগৃহীত
বাঙালির জীবনে সাইকেল শব্দটি বেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। একটা সময় এই জনপদে সাইকেলই ছিলো জনমানুষের প্রধান বাহন। সময়ের পরিক্রমায় বাহন হিসাবে সাইকেলের গুরুত্ব কমলেও, সাইকেল চালানোর উপকারী দিককে অস্বীকার করতে পারছেন না কেউই।

সাইকেল নিয়ে সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বলেছেন, সাইকেল চালানোর যে সহজাত আনন্দ সেটা আর অন্য কিছুতে পাওয়া যায় না। তিনি সত্যিই বলেছেন। কারণ স্বাস্থ্য গবেষক ও চিকিৎসকরা বলছেন, শরীর ও মন ঠিক রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় সাইক্লিং।

ছোটবেলায় সাইকেলের সাথে পরিচয় ঘটে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সময়ের সাথে সাইকেল এখন হয়ে উঠেছে শরীর ও পরিবেশবান্ধব একটি বাহন। ঢাকার ট্রাফিক জ্যামে আপনার সময়ও বাঁচিয়ে দেবে দুই চাকার সাইকেল। সেই সঙ্গে আপনাকে দেবে সুস্থ শরীরের নিশ্চয়তা।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের হিসাব বলছে, বিশ্বজুড়ে এখন দুই বিলিয়নের বেশি সাইকেল ব্যবহার হচ্ছে। ২০৫০ সাল পর্যন্ত যেই সংখ্যাটা ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটিতে গিয়ে ঠেকতে পারে।অর্থাৎ জীবিকার তাগিদে, বাহন হিসেবে বা খেলাধুলার মাধ্যম হিসেবে সাইকেল জনপ্রিয় হচ্ছে।

এতে আছে স্বাস্থ্যগত সুবিধা। সাইক্লিং দেহ ও মনের নানান স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন কমিয়ে দেয়, তেমনি শরীরের পেশিকে শক্তিশালী করার সাথে সাথে সহনশীলতাও বাড়িয়ে দেয়। সাইকেল চালানোর জন্য নির্দিষ্ট কোন বয়স নেই। যে কোন বয়সই সাইকেল চালানোর জন্য খুবই উপযোগী।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের এক হিসাব বলছে, যেসব পুরুষের বয়স ৫৫ থেকে ৬৯ বছর, তারা বাইসাইকেল দুর্ঘটনায় মারাও যেতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতার দিকে জোর দেয়া হয়েছে। ফলে চার থেকে পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত সাইকেল চালানো যায়।

বলা হয়ে থাকে, সাইক্লিং যদি একটা ওষুধ হতো, তাহলে ডাক্তাররা এটা সবাইকেই প্রেসক্রিপশনে লিখে দিতেন। স্কটল্যান্ডের এডিনবরা ও গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সাইকেল চালিয়ে কাজে যান তাদের যে কোনো রকম মৃত্যু ঝুঁকি ৪১ শতাংশ কমে যায়।সাইক্লিং শারীরিক নানা রোগ দূরে রাখার পাশাপাশি মানসিক রোগও দূর করে। অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ওয়েবসাইট বেটার হেলথ চ্যানেলে বলা হচ্ছে, সাইক্লিং স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সার, মানসিক অবসাদ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং আর্থাইটিসের মতো রোগ প্রতিরোধ করে।

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. জেসন গিল বলেন, সাইকেল চালিয়ে কাজে যাওয়ার উপকার অস্বীকার করা যাবে না। সাইকেল চালালে অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়। মনের সাথে যুদ্ধ করতে হয় না। আর শারীরিক ব্যায়ামগুলোর মধ্যে সাইক্লিং হলো সবচেয়ে সস্তা এবং আনন্দময়।

অন্যান্য স্পোর্টসের মতো এতে অনেক স্কিলের দরকার হয় না, বেশিভাগ মানুষই সাইকেল চালাতে জানে এবং সবচেয়ে মজার দিক হলো আপনি একবার সাইকেল চালানো শিখলে সেটা আর জীবনে ভুলবেন না। তাই কথায় বলে সাইকেলের সঙ্গে জীবনের ভারসাম্যের সম্পর্ক আছে।সাইক্লিংয়ের উপকার অনেক। ফুসফুসকে শক্তিশালী করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। শরীরের বিভিন্ন পেশিকে শক্তিশালী করে ও শরীরকে সংবেদনশীল করে তোলে। মানসিক চাপ কমিয়ে আনে। হাড়কে শক্তিশালী করে এবং শরীরের চর্বি ও প্রদাহ কমতে দারুণভাবে সহায়তা করে থাকে।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও গবেষণা বলছে, যারা নিয়মিত সাইকেল চালান তারা নিজেদের ১০ বছর কম বয়সী অনুভব করেন। কিন্তু দিনে ঠিক কতটা সময় সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যকর? বেটার হেলথ চ্যানেল বলছে, স্বাভাবিক ফিটনেসের জন্য সপ্তাহে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা সাইক্লিং হলেই চলে।

সাইক্লিংয়ের কিছু ঝুঁকিও আছে। গাড়ির সঙ্গে দুর্ঘটনা এর মধ্যে অন্যতম। স্বাভাবিকভাবেই বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে দুর্ঘটনায় পড়ার হার বেশি। শহর এলাকায় মোটরগাড়ির চাপ বেশি থাকে। আর দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অতিরিক্ত গতির বিষয়টি। ফলে সতর্কতা খুব জরুরি।

শহরের ব্যস্ত রাস্তায় সাইক্লিং করা সহজ নয়। সাইকেল কেনার সময় নিরাপত্তা গিয়ার ঠিক আছে কিনা চেক করে নিতে হবে। সব সময় রাস্তার একপাশ দিয়ে সাইকেল চালাতে হবে। সাইকেল চালালেও ট্রাফিক আইন মানতে হবে। কখনোই খুব দ্রুত সাইকেল চালানো যাবে না।সড়কে ঝুঁকি এড়াতে হেলমেট, গ্লাভস, সিগন্যাল লাইট থাকা জরুরি। মোড় ঘোরার সময় ইন্ডিকেশন লাইট বা হাতের সঙ্কেত দেয়া। রাস্তায় সিগন্যালগুলো মেনে চলা। উজ্জ্বল কাপড় পড়া। সাইক্লিংয়ের সময় হেডফোন পরিহার করা। প্রতি বছরে একবার সাইকেল সার্ভিস করানো।

বেটার হেলথ চ্যানেল বলছে, শরীরকে অতিরিক্ত চাপ দেয়ার পাশাপাশি বসার ভঙ্গি যথাযথ না হলে সাইকেল চালানো থেকে ইনজুরি হতে পারে। আবার অনেক সময় সাইকেল চালাতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়েও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে সাইক্লিস্টদের এসব দিকেও নজর রাখতে হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Voice Protidin Desk

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ