ঢাকা , শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার পরামর্শ ট্রাম্পের

ভয়েস প্রতিদিন ডেস্ক
আপলোড সময় : ০৫-১২-২০২৪ ১০:০৭:৫০ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ০৫-১২-২০২৪ ১০:০৭:৫০ পূর্বাহ্ন
কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার পরামর্শ  ট্রাম্পের ছবি:সংগৃহীত
কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার পরামর্শ দিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে তার গভর্নর হওয়ার আহবান জানিয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হলেও প্রাথমিকভাবে ট্রুডোর প্রতি ট্রাম্পের এ পরামর্শের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কারণ একটি দেশের শীর্ষ নেতা অপর একটি ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্রকে এ ধরনের কথা যে বলতে পারেন, সেটা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছিল না অনেকের কাছে।
 
কিন্তু ঘটনার কেন্দ্রস্থলের ব্যক্তিটা যখন ট্রাম্প, যার কিনা বিভিন্ন সময় নানা ধরনের বেফাঁস মন্তব্য করার সমৃদ্ধ অতীত রয়েছে, তখন তার পক্ষে আসলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। গত সপ্তাহে ফ্লোরিডায় নিজের রাজকীয় প্রাসাদ মার-এ-লাগোতে নৈশভোজে খানাপিনার প্রাক্কালে ট্রাম্প সত্যি সত্যিই জাস্টিন ট্রুডোকে এ প্রস্তাব দেন।
 
ট্রাম্প সমর্থক ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম ফক্সনিউজসহ অন্যান্য মার্কিন সংবাদমাধ্যম এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। নৈশভোজে উপস্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো জানায়, খানাপিনা ও খোশগল্পের এক পর্যয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ট্রাম্পকে বলেন, যদি তিনি সত্যি সত্যিই কানাডার ওপর প্রস্তাবিত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে তার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
  
জবাবে ট্রাম্প বলেন, যদি ট্রুডো তাই মনে করেন, তবে কানাডা অঙ্গরাজ্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দিতে পারে এবং সেক্ষেত্রে ট্রুডো প্রধানমন্ত্রীর বদলে ওই রাজ্যের গভর্নরের দায়িত্ব পেতে পারেন।
 
এদিকে, বিষয়টি ট্রাম্পের করা স্বভাবসুলভ কৌতুক,নাকি এর পেছনে রয়েছে আরও গভীর কোনো রহস্য, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে উভয় দেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেক বিশ্লেষকের মতে ট্রাম্প প্রায়ই কৌতুক করলেও তার সে কৌতুকের পেছনে থাকে গভীর কোন বার্তা।
 
প্রশ্ন উঠছে, নৈশভোজে কৌতুকের আড়ালে ট্রাম্প আসলে কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে কি বার্তা দিতে চেয়েছেন। তবে সে যাই হোক, ট্রাম্পের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কানাডা যদি সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে যোগ দেয়, তাহলে কেমন হবে তাদের অবস্থান, তা একবার দেখে নেয়া যাক।
 
কানাডা যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হয়, জনসংখ্যায় সবচেয়ে বড় এবং সবচে জনবহুল অঙ্গরাজ্য হবে কানাডা।বর্তমানে কানাডার জনসংখ্যা ৪ কোটি। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা ৩ কোটি ৯০ লাখ। ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা কানাডার প্রায় কাছাকাছি হলেও আয়তনে এটি ২৫ গুণ বড়।
 
এছাড়া, অর্থনীতিতে তিন অঙ্গরাজ্য থেকে পিছিয়ে থাকবে কানাডা। অর্থনীতির আয়তন বিবেচনা করলে কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সমৃদ্ধ অর্থনীতির অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস কিংবা নিউইয়র্ককে কিন্তু টেক্কা দিতে পারবে না।
 
অবশ্য এ তিন অঙ্গরাজ্য বাদে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য ৪৭টি অঙ্গরাজ্য থেকে কানাডার জিডিপি বেশি, যার আকার ২.২ ট্রিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির আকার কমপক্ষে দশগুণের বেশি। বর্তমানে দেশটির অর্থনীতি ২৭ ট্রিলিয়ন ডলার। 
 
শুধু অর্থনীতির আকারই নয়, মাথাপিছু আয়েও কানাডা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক গড় মাথাপিছু আয় যেখানে ৮১ হাজার ডলার, সেখানে কানাডার মাথাপিছু আয় ৫৩ হাজার ডলার।
 
যে সব সুবিধা পাবে কানাডা
 
আমদানি কিংবা রফতানি, কানাডার অর্থনীতির প্রায় পুরোটাই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য কানাডা। অন্যদিকে, কানাডারও রফতানির ৭৫ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, যার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি, অটোমোবাইল ও অন্যান্য কাঁচামাল।
 
দুদেশের এ অর্থনৈতিক লেনদেন ও নির্ভরতার বিষয়টিই প্রমাণ করে যে, যদি কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়, তাহলে দুদেশের বাণিজ্যের আকারে নাটকীয় পরিবর্তন আসবে। কারণ সীমান্ত উঠে যাওয়ায় তাদের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আর ট্যারিফ ও অন্যান্য শুল্ক কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
 
সীমান্ত সত্যি সত্যিই উঠে গেলে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে কানাডা। কারণ এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে আরও সস্তা হবে কানাডায় উৎপাদিত পণ্য।
 
তবে বৃহত্তর অর্থে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে যাওয়াটা পছন্দ করবেন না কানাডার বাসিন্দারা। কারণ অপেক্ষাকৃত কম খরচে সব নাগরিকের স্বাস্থ্যগত সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় কানাডায়।  
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে এ সুবিধা নিশ্চিত হয় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মাধ্যমে। ফলে যেসব মার্কিনির ইন্স্যুরেন্স থাকে না, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা সুবিধা পেতে ব্যাপক জটিলতার মুখে পড়তে হয়।
 
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার খরচও অনেক ব্যয়বহুল। কানাডা যদি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হয়, তবে তাদের স্বাস্থ্যসেবার আইন কানুনও অনুরূপ হবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো। স্বভাবতই কানাডার বাসিন্দারা তা পছন্দ করবেন না বলেই মনে হয়।
 
 বন্দুকের ব্যক্তিগত মালিকানা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপক পার্থক্য
 
এছাড়া, বন্দুক নিয়েও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য রয়েছে মার্কিনি ও কানাডীয়দের মধ্যে। এটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে দুদেশের মিলনপথে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রতিটি নাগরিককে বন্দুক ধারণের অধিকার দেয়, যা বিখ্যাত সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট বা দ্বিতীয় সংশোধনীতে নিশ্চিত করা হয়েছে।
 
এদিকে, বন্দুকের মালিকানার ব্যাপারে অনেক বেশি কঠোর কানাডাসরকার। সেখানে বন্দুকের মালিক হওয়ার পথে লাইসেন্স ও প্রশিক্ষণসহ লাগে আরও অনেক অনুমোদন। বন্দুক পাওয়া কঠিন হওয়ার কারণে কানাডায় বন্দুকজনিত মৃত্যুর হারও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক কম।গত ২৫ বছর ধরে গড়ে প্রতি বছর কানাডায় বন্দুকের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা যেখানে মাত্র ১ হাজার ৩০০, সেখানে ২০২১-এর পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে ওই বছর বন্দুকের গুলিতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো প্রায় অর্ধলাখ।
 
ইউএস সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২১ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে সংঘর্ষে কিংবা অপরের গুলিতে। অন্যদিকে, বন্দুকের গুলি চালিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ২৬ হাজার।ট্রাম্পের হুমকিতে শঙ্কিত কানাডার ব্যবসায়ী মহল
 
এদিকে, অঙ্গরাজ্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কানাডার অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে দেয়া ট্রাম্পের পরামর্শ যতই হাস্যরস তৈরি করুক না কেন, কানাডার ওপর ট্যারিফ আরোপ সংক্রান্ত তার হুমকিকে মোটেই হালকাভাবে নিচ্ছে না উভয় দেশের বাণিজ্যিক মহল।
 
বিশেষ করে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের দেয়া ২৫ শতাংশ ট্যারিফ আরোপের হুমকিতে রীতিমতো অস্থিরতা তৈরি হয়েছে কানাডার ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক মহলে। কানাডার জ্বালানি সমৃদ্ধ প্রদেশ আলবার্টার অর্থনীতির প্রায় পুরোটাই যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক। এ প্রদেশে উৎপাদিত জ্বালানির প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
 
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ট্যারিফ আরোপিত হলে হুমকির মুখে পড়বে আলবার্টার তেল উৎপাদন। এ ব্যাপারে কানাডার আলবার্টাভিত্তিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ডেনিস ম্যাককনাহি বিবিসিকে বলেন, কানাডার সামনে কোন বিকল্প নেই। তাদের এ ব্যাপারে ট্রাম্পের সঙ্গে বোঝাপড়ার উপায় খুঁজতে হবে। 
 তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের ট্যারিফ বাস্তবায়ন হলে আলবার্টায় কর্মক্ষেত্র সঙ্কুচিত হবে, কর্মীরা চাকরি হারাবেন, বৃহত্তর অর্থে তা প্রভাব ফেলবে পুরো কানাডার ওপরই।
 
কারণ কানাডার অপেক্ষাকৃত দরিদ্র প্রদেশগুলোর স্বাস্থ্য সেবাসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় কর্মসূচির বেশিরভাগ তহবিল যোগায় মূলত আলবার্টার মতো অপেক্ষাকৃত ধনী প্রদেশগুলো। এই ট্যারিফের প্রতিক্রিয়ায় ডলারের বিপরীতে কানাডার মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়নেরও শঙ্কা প্রকাশ করেন ডেনিস ম্যাককনাহি।’ 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Voice Protidin Desk

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ