লন্ডন থেকে কলামিস্ট ও লেখক: নাজিম রুবেল
বিএনপির ৪৭ বছর : ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান, গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও আগামীর চ্যালেঞ্জ
নিজেস্ব প্রতিবেদক
আপলোড সময় :
৩১-০৮-২০২৫ ০৭:১০:২৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
৩১-০৮-২০২৫ ০৭:১০:২৫ অপরাহ্ন
লেখক: লন্ডন থেকে -কলামিস্ট : নাজিম রুবেল
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আজ তাদের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত এ দলটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে কেবল একটি দলের জন্ম নয়, বরং গণতন্ত্র পুনর্গঠনের এক বিকল্প ধারার উত্থান। এ বছরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ—কারণ দেশ সদ্য অতিক্রম করেছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান, যেখানে বিএনপি তার দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতা প্রমাণ করেছে।
জন্মলগ্নের প্রেক্ষাপট
স্বাধীনতার পর বিভক্ত রাজনীতিতে জিয়াউর রহমান “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” দর্শনের ভিত্তিতে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক মুক্তি ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ—এই চার ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো বিএনপি দ্রুতই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।
রাজপথের সংগ্রাম ও ক্ষমতার অভিজ্ঞতা
বিএনপি তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে। আবার রাজপথে থেকেও বহুবার রক্ত দিয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে। ৯০-এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন, ২০০৬-০৮ সালের আন্দোলন কিংবা একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ—সবখানেই বিএনপির ভূমিকা ছিল কেন্দ্রীয়।
৫ আগস্ট ২০২৪: গণঅভ্যুত্থান ও বিএনপির ভূমিকা
গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচিত হয়। স্বৈরাচারী সরকারের পতন, অন্তর্বর্তী সরকারের আবির্ভাব এবং গণমানুষের রক্তে লেখা অভ্যুত্থান—সব মিলিয়ে এ দিন আজ জাতীয় দিবসে পরিণত।
এই আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি ছিল বিএনপির দীর্ঘদিনের সংগ্রাম। দলের অঙ্গসংগঠন বিশেষ করে ছাত্রদল ও যুবদল রাজপথে বীরত্বের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। নেতাকর্মীরা কারাবরণ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন, তবু জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি থেকে সরে আসেননি। বলা যায়, ৫ আগস্টের অর্জন বিএনপির দীর্ঘ সংগ্রামেরই ফসল।
বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
তবে অর্জনের পথ মসৃণ নয়। বিএনপির সামনে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে—
• সংগঠন পুনর্গঠন: দমন-পীড়নে দুর্বল হয়ে পড়া স্থানীয় সংগঠনকে পুনর্গঠন অপরিহার্য।
• তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করা: ৫ আগস্ট তরুণদের আন্দোলনেই শক্তি পেয়েছিল। বিএনপিকে তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
• নীতিনির্ভর রাজনীতি: কেবল ক্ষমতালাভ নয়, উন্নয়ন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও রাষ্ট্র সংস্কারের সুস্পষ্ট রূপরেখা দিতে হবে।
• আন্তর্জাতিক কূটনীতি: বৈশ্বিক সমীকরণে নিজেদের অবস্থানকে কার্যকরভাবে তুলে ধরা এখন সময়ের দাবি।
৪৭ বছরের যাত্রায় বিএনপি বারবার প্রমাণ করেছে যে তারা গণমানুষের অধিকার রক্ষার শক্তি। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সেই প্রমাণকে নতুন করে দৃঢ় করেছে। এখন প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস, সংগঠনগত পুনর্জাগরণ ও বাস্তবসম্মত কর্মসূচি।
বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শপথ হোক—গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণ। তাহলেই ৫ আগস্টের রক্ত ও ত্যাগ বৃথা যাবে না, আর বিএনপি হয়ে উঠবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রধান রক্ষাকবচ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SM Sohel
কমেন্ট বক্স