ঢাকা , বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |

লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের অফিস সহায়ক পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ।।

আপলোড সময় : ১৬-০৯-২০২৫ ০১:১৮:৫৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৬-০৯-২০২৫ ০১:১৮:৫৭ অপরাহ্ন
লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের অফিস সহায়ক পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ।।
বিশেষ প্রতিবেদন। পরীক্ষায় প্রথম হলেন একজন, চাকরি পেলেন অন্যজন!চাকরিবঞ্চিত আবদুল বাছেত লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের অফিস সহায়ক পদে চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেও চাকরিবঞ্চিত হয়েছেন জেলার রামগঞ্জ উপজেলার আবদুল বাছেত। উপজেলার দল্টা গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে আবদুল বাছেত এই পরীক্ষায় লিখিত ও মৌখিক মিলে সর্বোচ্চ ৬৯ নম্বর পেয়েছিলেন। আবদুল বাসেত বলেন, ‘আমি প্রথম স্থান অর্জন করে বাছাই কমিটির সুপারিশও পেয়েছিলাম। তবে আমাকে বাদ দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যিনি পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছেন তাকে। তথ্য অধিকার আইনে আমি পরীক্ষার ফল সংগ্রহ করে আমার প্রথম স্থান অর্জন করার তথ্য নিশ্চিত হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বঞ্চিত করার তথ্য উল্লেখ করে প্রতিকার চেয়ে আমি আইন উপদেষ্টা, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর আবেদনও করছিলাম। তবে এখন পর্যন্ত আমি সাড়া পাইনি।’ যথাক্রমে দুদক ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর আবেদন করেও প্রতিকার না পেয়ে সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বরাবর আবেদন করেন ভুক্তভোগী আবদুল বাছেত। আবেদনে তিনি লেখেন, ‘২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আমি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। ওই পরীক্ষার পর আমাকে হঠাৎ এক দিন রুবেল পাটোয়ারী নামক এক ব্যক্তি ফোন করে পরীক্ষা সম্পর্কে আমার সঙ্গে কথা বলেন এবং আমার সঙ্গে দেখা করেন। পরে আমি তাকে জিজ্ঞেস করি যে, আপনি আমার সব তথ্য এবং আমার ফোন নম্বর কোথায় পেলেন? তখন তিনি আমাকে বলেন, লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ সাদেকুর রহমান সাহেব দিয়েছেন। আপনি যদি নিয়োগ পেতে চান তাহলে আমাকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে, যদি না দেন আপনি চাকরি পাবেন না। ওই বিষয়ে কাউকে জানালে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।’ পরীক্ষা-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের উল্লেখ করে ভুক্তভোগী আবদুল বাছেত আইন উপদেষ্টা বরাবর লেখা আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, ‘তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মেধা অনুযায়ী যারা প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন তাদের প্রাপ্ত নম্বরের সত্যায়িত অনুলিপি চাই। আবেদন করার পর গত ২৩ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের নাজির মো. মনির হোসেন লোক মারফতে আমাকে খবর পৌঁছান যে, আমি যেন সরাসরি নাজির সাহেবের অফিস কক্ষে সাক্ষাৎ করি। নাজির সাহেব আমাকে বলেন যে, তুমি যে তথ্য অধিকার আইনে দরখাস্ত করেছ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুালে পরীক্ষার রেজাল্ট চেয়ে আবেদন করেছ তা প্রত্যাহার করো, চাকরিটা ওরে দিয়েছে তোমার কিছুই করার নাই। তুমি অযথা প্যাছাল বাড়াইও না, অন্যথায় তোমাকে হাজতে দেব বলিয়া আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি। পরবর্তীতে আমি তথ্য অধিকার আইনের দরখাস্তটি প্রত্যাহার করি নাই।’ আবেদনে ভুক্তভোগী তথ্য অধিকার আইনে পাওয়া প্রতিবেদন উল্লেখ করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদনে দেখি আমি মেধা অনুযায়ী ১ম স্থান অর্জন করেছি এবং নিয়োগদানের জন্য আমার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।’ আবুল বাছেত আইন উপদেষ্টাকে করা আবেদনে আরও বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইনে পর আরেকটি আবেদন করে আমি ওই পদে কাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা জানতে চাই। তবে তা আমাকে জানানো হয়নি। লক্ষ্মীপুরের ‘বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, কোন সঠিক তথ্য দেন নাই। কিন্তু আমি জানতে পারি যে, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী আবদুল মুয়ীদকে ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ করা হয়েছে এবং তিনি যোগদান করেছেন। বর্তমানে তিনি কর্মরত আছেন।’ প্রসঙ্গত, ভুক্তভোগীর দ্বিতীয় দফায় তথ্য অধিকার আইনে করা আবেদনের (কাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে) পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ জুলাই জবাব দেন সংশ্লিষ্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। এতে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা না হলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়। এতে লেখা হয়, ‘আপনার চাহিত তথ্য প্রকাশের ফলে ব্যক্তির জীবন বা শারীরিক নিরাপত্তা বিপদাপন্ন হতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায়’ তথ্য প্রদান করা হলো না। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর একই অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার চেয়ে গত ২২ জানুয়ারি আবেদন করেছিলেন আবদুল বাছেত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোছাইন বলেন, ‘কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এবং লক্ষ্মীপুর জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ সাদেকুর রহমান গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, আমি ব্যাখ্যা দিয়েছি।’

নিউজটি আপডেট করেছেন : Voice Protidin Desk

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ