বিশ্ব নেতাদের অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
আপলোড সময় :
১৭-০২-২০২৪ ১১:১০:৩৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
১৭-০২-২০২৪ ১১:১০:৩৪ পূর্বাহ্ন
সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের সামনে ছয়টি প্রস্তাব পেশ করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য জলবায়ু অর্থায়ন ছাড় করার এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য তহবিলকে সরিয়ে আনার লক্ষ্যে অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের জন্য সম্পদের সংস্থান করা দরকার। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, মানবতার অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে পড়বে, তখন সংকীর্ণ স্বার্থ রক্ষার পথ অনুসরণ করলে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না।"
শুক্রবার জার্মানিতে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্স ২০২৪-এ "ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স" শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় তিনি তার প্রস্তাবিত পরামর্শে এই মন্তব্য করেন। ছয়টি পরামর্শ তুলে ধরার সময় তার প্রথম পরামর্শ উপস্থাপন করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমাদের সঠিক পথে রাখতে জলবায়ু অর্থায়নের বরাদ্দ ছাড় করার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।"
তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, উন্নত দেশগুলিকে পরিকল্পনার ভিত্তিতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দুই বছরে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, "এই বছরের শেষ নাগাদ, আমাদের সকলকে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে বিশেষ করে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে ২০২৫-পরবর্তী একটি নতুন জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একমত হতে হবে"।
তার দ্বিতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বকে যুদ্ধ ও সংঘাত, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে যা গাজা ও অন্যত্র বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সংঘাতের অনুভূতির বোধ থেকেও অনেক দূরে অনুভূত হয়।
তার তৃতীয় পরামর্শে, তিনি বলেন, জলাযায়ু প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য অর্থায়নের তীব্র ভারসাম্যহীনতা দূর করার জন্য অভিযোজন অর্থায়নের বর্তমান পর্যায় অন্তত দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে, অভিযোজনে সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ইউরো প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়ার জন্য তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁকে ধন্যবাদ জানান।
চতুর্থ পরামর্শে তিনি বলেন, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলির অর্থ প্রাপ্তি সুগম করার জন্য দীর্ঘকালের অমীমাংসিত সমস্যাটি তাদের সক্ষমতায় বিনিয়োগ করার সুযোগসহ সমাধান করতে হবে।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে অর্থায়ন পাওয়ার জন্য আমাদের শুধুমাত্র দুটি যোগ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং আরও দুটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।"
তার পঞ্চম পরামর্শে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক অর্থায়নের ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ঋণের বোঝা দূর করতে তাদের জন্য অনুদান ও সুবিধাজনক ঋণ লাভের সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থপূর্ণ ফলাফল দেখাতে হবে।
সর্বশেষ ও ষষ্ঠ পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু কর্মসূচি জন্য বেসরকারি পুঁজি প্রবাহের জন্য সরকারগুলোকে সঠিক পরিকল্পনা, নীতি ও ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রকল্পগুলির জন্য বেসরকারি পুঁজি আকৃষ্ট করার জন্য উদ্ভাবনী, মিশ্র অর্থায়নের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, "এটি সুস্পষ্ট যে, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের বিপুল পরিমাণ ঘাটতির কার্যকর সমাধান করা যাবে না।"
শেখ হাসিনা বলেন, সকলেই জলবায়ু প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনে বিনিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নের বর্তমান মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে।
তিনি বলেন, “দুঃখের বিষয়, প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন এখনও গুরুতরভাবে অপর্যাপ্ত। 'জলবায়ু অর্থায়ন' এবং এর অ্যাকাউন্টিং পদ্ধতির বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত সংজ্ঞার অনুপস্থিতির কারণে এটি আরও জটিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে কপ-১৫ চলাকালে শেষ মুহূর্তের সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন যে, আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করা বেশ কঠিন হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Monir Hossain
কমেন্ট বক্স