ভারতে আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে লোকসভা নির্বাচন। এরই মধ্যে একটি দুর্নীতি মামলায় সরকারবিরোধী ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম অংশীদার আমআদমি পার্টির প্রধান এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই শুরু হয়েছে।
সরকার এই গ্রেফতারকে আইনের বিষয় উল্লেখ করলেও বিরোধীরা এর কড়া সমালোচনা করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারে গতকাল বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ হয়েছে এবং অনেককে আটকও করা হয়েছে। এদিকে কেজিরওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিতে হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি আবেদনও করা হয়েছে। দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির শাসনের আশঙ্কা বাড়ছে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ
কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ভারত জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। প্রতিবাদ জানাতে এএপির পক্ষ থেকে ব্যাপক বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। শুধু দিল্লি নয়, দেশের সর্বত্র বিজেপি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি পালন করা হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে দিল্লির আইটিওর কাছে জমায়েত করা হলে বহু কর্মী-সমর্থককে দিল্লি পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
এসব ব্যক্তির মধ্যে সৌরভ ভরদ্বাজও রয়েছেন। দিল্লিতে বিভিন্ন স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সতর্ক রাখা হয়েছে দাঙ্গারোধ বাহিনীকেও। পুলিশের সঙ্গে আপ নেতাকর্মীদের তুমুল ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া ঝাড়খন্ডসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ হয়।
কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল আম আদমি পার্টি (এএপি)। বৃহস্পতিবার রাতেই আবেদন করেছিল তারা সুপ্রিম কোর্টে। গতকাল শুক্রবার সকালেও প্রধান বিচারপতির এজলাসে দ্রুত মামলা শোনার আবেদন জানিয়েছিলেন কেজরিওয়ালের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। কিন্তু আস্থা না পাওয়ায় পরে সেই আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আম আদমি পার্টি (আপ) ঠিক করেছে, তারা নিম্ন আদালতে যাবে। এর কারণ, এই আবগারি নীতি মামলায় বিআরএস নেত্রী কে কবিতাকে জামিন দেওয়া হয়নি।
কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই বিরোধী দলগুলো একে একে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছিল। গতকাল সকালে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাও। গ্রেপ্তারের নিন্দা করে তিনি মোদি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। ঐ পোস্টেই মমতা দাবি করেন, আদর্শ আচরণবিধি চলাকালীন বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করিয়ে জনমানসে প্রভাব ফেলতে চাইছে বিজেপি।
বিরোধীরা সমালোচনা করলেও ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি ও দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া আন্না হাজারে। শর্মিষ্ঠা মুখার্জি লেখেন, কেজরিওয়াল এবং আন্না হাজারে এই একই অভিযোগ এনেছিলেন কংগ্রেস পরিচালিত দিল্লির সরকারের বিরুদ্ধে। তখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শীলা দীক্ষিত।
কেজরিওয়াল তখন দাবি করেছিলেন তার কাছে ট্রাংকভর্তি প্রমাণ রয়েছে। তবে কেউ কখনো সেই ট্র্যাংক দেখেননি। আন্না বলেন, ক্ষমতার লোভই কেজরিওয়ালকে দিয়ে নীতি বিরুদ্ধে কাজ করাচ্ছে। যার ফল ভুগতে হবে। আন্না হাজারে আরো বলেন, কেজরিওয়ালের ভূমিকায় তিনি ব্যথিত। একটা সময় ছিল যখন কেজরি মদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করত। আজ মদ নিয়ে নীতি তৈরি করছে। কিন্তু কী-বা করার ছিল। ক্ষমতায় সামনে সবই শক্তিহীন। এবার ওর বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, সেটা আইনের পথেই নেওয়া হোক।
ইডির ১০ দিনের হেফাজতে কেজরিওয়াল
ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কর্তৃক দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে কেজরিওয়ালকে পেশ করে ইডি। গতকাল সংস্থাটি জানিয়েছে, কেজরিওয়ালকে ১০ দিনের ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইডি জানায়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালই এই মামলায় ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’। দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার ক্ষমতাসীন দল ভারত রাষ্ট্র সমিতির নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মেয়ে কে কবিতা কেজরিওয়াল, আপ নেতা মণীষ শিশোদিয়া ও সঞ্জয় সিংয়ের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে ইডি জানিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনে বিরোধী জোট
গতকাল কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার এবং বিরোধীদের হেনস্তা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে যায় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধিদল। বাংলার শাসক দল তৃণমূলের দুই জন প্রতিনিধিও ছিলেন সেই দলে। ভোটের মাঠ সমান এবং সমতল রাখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।
তাই কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের পর সেই কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করলেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধিরা। বৈঠকের পর বেরিয়ে তারা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। কারণ ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে আসলে বিরোধীদের কোণঠাসা করতে চাইছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকার।
বৈঠকের পর বেরিয়ে কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এখানে প্রায় সবকটি বিরোধী দলের প্রতিনিধি রয়েছেন। গত রাতে যা হয়েছে (কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার), তা নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।
এটি কোনো ব্যক্তি বা দলের বিষয় নয়, সংবিধানের সাধারণ কাঠামোর বিষয়। নির্বাচনের জন্য সমান, সমতল মাঠ প্রয়োজন। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল এজেন্সির অপব্যবহার করে সেই সমতল মাঠটির ক্ষতি করছে। এতে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন, সর্বোপরি গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ছে।’ সিঙ্ঘভি আরো বলেন, ‘স্বাধীন ভারতের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো জনগণ নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে পদে থাকাকালীন গ্রেপ্তার করা হলো। পার্লামেন্টে সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কীভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে, আমরা তার প্রমাণও দিয়েছি কমিশনকে।’
রাষ্ট্রপতি শাসনের আশঙ্কা
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার রাজনৈতিক দল আম আদমি পার্টি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হলেও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়ালই থাকবেন।
কিন্তু বাস্তবে সেটা সম্ভব নয় বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন। আর এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের আশঙ্কা বেড়েছে জম্মু এবং কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নেতা ওমর আবদুল্লাহর কথা। গতকাল তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী অবস্থায় জেলে থাকলে বিজেপির কাছে সুযোগ থাকবে, সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার। এই মুহূর্তে আম আদমি পার্টি কেজরিওয়ালকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে বহাল রাখার যে বার্তা দিচ্ছে, তাকে অজুহাত বানিয়ে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারে।
এদিকে কেজরিওয়ালকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর আবেদন করে দায়ের হয়েছে জনস্বার্থ মামলা। গতকাল শুক্রবার দিল্লি হাইকোর্টে দায়ের হওয়া ওই মামলায় কেন্দ্র এবং দিল্লি সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে কোন আইনবলে গ্রেপ্তারের পর কেজরিওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী রাখা হবে।
গতকাল বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক কাবেরী বাওয়েজার এজলাসে প্রবেশের আগে কেজরিওয়াল বলেন, ‘আমার জীবন দেশের উদ্দেশে নিবেদিত। তাকেও বলতে শোনা গিয়েছে যে, জেলের ভিতর থেকেও তিনি মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন।’ —হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও আনন্দবাজার পত্রিকা
সরকার এই গ্রেফতারকে আইনের বিষয় উল্লেখ করলেও বিরোধীরা এর কড়া সমালোচনা করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারে গতকাল বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ হয়েছে এবং অনেককে আটকও করা হয়েছে। এদিকে কেজিরওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিতে হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি আবেদনও করা হয়েছে। দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির শাসনের আশঙ্কা বাড়ছে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ
কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ভারত জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। প্রতিবাদ জানাতে এএপির পক্ষ থেকে ব্যাপক বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। শুধু দিল্লি নয়, দেশের সর্বত্র বিজেপি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি পালন করা হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে দিল্লির আইটিওর কাছে জমায়েত করা হলে বহু কর্মী-সমর্থককে দিল্লি পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
এসব ব্যক্তির মধ্যে সৌরভ ভরদ্বাজও রয়েছেন। দিল্লিতে বিভিন্ন স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সতর্ক রাখা হয়েছে দাঙ্গারোধ বাহিনীকেও। পুলিশের সঙ্গে আপ নেতাকর্মীদের তুমুল ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া ঝাড়খন্ডসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ হয়।
কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল আম আদমি পার্টি (এএপি)। বৃহস্পতিবার রাতেই আবেদন করেছিল তারা সুপ্রিম কোর্টে। গতকাল শুক্রবার সকালেও প্রধান বিচারপতির এজলাসে দ্রুত মামলা শোনার আবেদন জানিয়েছিলেন কেজরিওয়ালের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। কিন্তু আস্থা না পাওয়ায় পরে সেই আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আম আদমি পার্টি (আপ) ঠিক করেছে, তারা নিম্ন আদালতে যাবে। এর কারণ, এই আবগারি নীতি মামলায় বিআরএস নেত্রী কে কবিতাকে জামিন দেওয়া হয়নি।
কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই বিরোধী দলগুলো একে একে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছিল। গতকাল সকালে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাও। গ্রেপ্তারের নিন্দা করে তিনি মোদি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। ঐ পোস্টেই মমতা দাবি করেন, আদর্শ আচরণবিধি চলাকালীন বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করিয়ে জনমানসে প্রভাব ফেলতে চাইছে বিজেপি।
বিরোধীরা সমালোচনা করলেও ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি ও দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া আন্না হাজারে। শর্মিষ্ঠা মুখার্জি লেখেন, কেজরিওয়াল এবং আন্না হাজারে এই একই অভিযোগ এনেছিলেন কংগ্রেস পরিচালিত দিল্লির সরকারের বিরুদ্ধে। তখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শীলা দীক্ষিত।
কেজরিওয়াল তখন দাবি করেছিলেন তার কাছে ট্রাংকভর্তি প্রমাণ রয়েছে। তবে কেউ কখনো সেই ট্র্যাংক দেখেননি। আন্না বলেন, ক্ষমতার লোভই কেজরিওয়ালকে দিয়ে নীতি বিরুদ্ধে কাজ করাচ্ছে। যার ফল ভুগতে হবে। আন্না হাজারে আরো বলেন, কেজরিওয়ালের ভূমিকায় তিনি ব্যথিত। একটা সময় ছিল যখন কেজরি মদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করত। আজ মদ নিয়ে নীতি তৈরি করছে। কিন্তু কী-বা করার ছিল। ক্ষমতায় সামনে সবই শক্তিহীন। এবার ওর বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, সেটা আইনের পথেই নেওয়া হোক।
ইডির ১০ দিনের হেফাজতে কেজরিওয়াল
ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কর্তৃক দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে কেজরিওয়ালকে পেশ করে ইডি। গতকাল সংস্থাটি জানিয়েছে, কেজরিওয়ালকে ১০ দিনের ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইডি জানায়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালই এই মামলায় ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’। দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার ক্ষমতাসীন দল ভারত রাষ্ট্র সমিতির নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মেয়ে কে কবিতা কেজরিওয়াল, আপ নেতা মণীষ শিশোদিয়া ও সঞ্জয় সিংয়ের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে ইডি জানিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনে বিরোধী জোট
গতকাল কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার এবং বিরোধীদের হেনস্তা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে যায় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধিদল। বাংলার শাসক দল তৃণমূলের দুই জন প্রতিনিধিও ছিলেন সেই দলে। ভোটের মাঠ সমান এবং সমতল রাখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।
তাই কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের পর সেই কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করলেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধিরা। বৈঠকের পর বেরিয়ে তারা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। কারণ ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে আসলে বিরোধীদের কোণঠাসা করতে চাইছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকার।
বৈঠকের পর বেরিয়ে কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এখানে প্রায় সবকটি বিরোধী দলের প্রতিনিধি রয়েছেন। গত রাতে যা হয়েছে (কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার), তা নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।
এটি কোনো ব্যক্তি বা দলের বিষয় নয়, সংবিধানের সাধারণ কাঠামোর বিষয়। নির্বাচনের জন্য সমান, সমতল মাঠ প্রয়োজন। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল এজেন্সির অপব্যবহার করে সেই সমতল মাঠটির ক্ষতি করছে। এতে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন, সর্বোপরি গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ছে।’ সিঙ্ঘভি আরো বলেন, ‘স্বাধীন ভারতের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো জনগণ নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে পদে থাকাকালীন গ্রেপ্তার করা হলো। পার্লামেন্টে সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কীভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে, আমরা তার প্রমাণও দিয়েছি কমিশনকে।’
রাষ্ট্রপতি শাসনের আশঙ্কা
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার রাজনৈতিক দল আম আদমি পার্টি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হলেও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়ালই থাকবেন।
কিন্তু বাস্তবে সেটা সম্ভব নয় বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন। আর এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের আশঙ্কা বেড়েছে জম্মু এবং কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নেতা ওমর আবদুল্লাহর কথা। গতকাল তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী অবস্থায় জেলে থাকলে বিজেপির কাছে সুযোগ থাকবে, সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার। এই মুহূর্তে আম আদমি পার্টি কেজরিওয়ালকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে বহাল রাখার যে বার্তা দিচ্ছে, তাকে অজুহাত বানিয়ে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারে।
এদিকে কেজরিওয়ালকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর আবেদন করে দায়ের হয়েছে জনস্বার্থ মামলা। গতকাল শুক্রবার দিল্লি হাইকোর্টে দায়ের হওয়া ওই মামলায় কেন্দ্র এবং দিল্লি সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে কোন আইনবলে গ্রেপ্তারের পর কেজরিওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী রাখা হবে।
গতকাল বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক কাবেরী বাওয়েজার এজলাসে প্রবেশের আগে কেজরিওয়াল বলেন, ‘আমার জীবন দেশের উদ্দেশে নিবেদিত। তাকেও বলতে শোনা গিয়েছে যে, জেলের ভিতর থেকেও তিনি মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন।’ —হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও আনন্দবাজার পত্রিকা