বঙ্গোপসাগর থেকে ডাঙ্গায় উঠে আসার সময় প্রায় ৭ ঘণ্টা ব্যাপী প্রচণ্ড শক্তির ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবলীলায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দেশের উপকূলবর্তী বিশাল অঞ্চল। প্রায় দ্বিতল ভবনের সমান উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত এবং তছনছ হয়ে গেছে বহু জনপদ, ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ,গাছপালা, মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত, দোকানপাট। গতকাল বিকাল পর্যন্ত সাত জেলায় প্রাণহানি ঘটেছে অন্তত:১২ জনের। সরকারি হিসাবে ১৯ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাড়ে ৩৭ লাখ মানুষ। পৌনে ৩ কোটি গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ছেদ পড়েছে। ১৫ হাজার মোবাইল টাওয়ার নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
এছাড়া খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা জোনের ৬১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে অর্ধলক্ষাধিক মাছের ঘের। দেড় লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।বুক চিতিয়ে ঝড়ের প্রলয়ংকরী তাণ্ডবের উন্মত্তা খাটো করে দেয়া সুন্দরবন ১০ ফুট পানির নীচে তলিয়ে গেছে। হরিণসহ অনেক প্রাণীর লাশ ভাসছে সুন্দরবনের নদনদীর পানিতে। রবিবার রাত পৌনে নয়টার দিকে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাগেরহাটের মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পটুয়াখালীর খেপুপাডা উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র আঘাত হানতে শুরু করে। ৪০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের এই ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসাত্মক তাণ্ডব ছিল ২০০৭ সালের সিডারের পরে সর্বোচ্চ। ধীরে ধীরে দীর্ঘক্ষণ ধরে ঝড়টি স্থলভাগে উঠে আসার অগ্র-পশ্চাতে মধ্যরাতে ঘূর্নিতান্ডবের সাথে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুরের বেশ বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে জানান,ঝড়টি স্থলভাগে উঠে তাণ্ডব চালানোর পর অনেকটা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে ঢাকায় আরও বৃষ্টি হবে। সেই সাথে ঝোড়ো বাতাস বইবে। ঢাকার ওপর দিয়ে এটা পর্যায়ক্রমে সিলেট দিয়ে বাংলাদেশের বাইরে যাবে। বিকালের ঝড়ের কেন্দ্রাংশ ঢাকায় প্রবেশ করে। ঢাকায় বৃষ্টিপাত আর দমকা বাতাস বেড়েছে।
আজিজুর রহমান বলেন, রেমাল রবিবার সারা রাত তাণ্ডব চালিয়েছে। এর অগ্রভাগ গতকাল দুপুরে উপকূলে আসে। মধ্যরাতে কেন্দ্র ওপরে উঠে আসে। এরপর ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা ধরে সে পুরোটা ওপরে উঠে আসে। ৬টার আগেই উপকূলে উঠে আসে। এখন সাইক্লোন থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাব যশোরে আছে এরপর ঢাকায় আসবে। বাতাস ২০ থেকে ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকবে। এর চেয়ে আর বাড়ার সুযোগ নাই। এটি উপকূলের পুরোটা অংশ পেয়েছে। এটি আজ বৃষ্টিঝড়ে মধ্যে আরও দুর্বল হবে। এরপর নিম্নচাপ আকারে আসামের দিকে চলে যাবে। পরিচালক জানান, ঝড়ের সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়াতে ১১১ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। রাত ১টা ৩০ মিনিটে এটা রেকর্ড করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামে ২০৩ মিলিমিটার।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সাত জেলায় ১২ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে পটুয়াখালীতে ৩, সাতক্ষীরায় ১, ভোলায় ৩, চট্টগ্রাম ১, কুমিল্লা ১, বরিশালে ২ এবং খুলনায় ১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।এর মধ্যে ভোলায় রেমালের তাণ্ডবের মধ্যে গাছ-ঘরচাপায় নারী ও শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার ভোররাতের দিকে লালমোহন, দৌলতখান ও বোরহান উদ্দিন উপজেলায় তাদের মৃত্যু হয় বলে থানার পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নিহতরা হলেন- লালমোহন উপজেলার মনেজা খাতুন (৫৫), দৌলতখান উপজেলার মাইসা (৪) ও বোরহান উদ্দিন উপজেলার জাকির (৫০)। লালমোহন থানার ওসি এসএম মাহবুব উল আলম জানান। ঘূর্ণিঝড়ে ঘরের নিচে চাপা পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মো. হান্নান বলেন,মনেজা খাতুন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এ সময় তার স্বামী ও ৫-৭ বছর বয়সী নাতিনও তার সঙ্গে একই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোর রাত ৪টার দিকে তীব্র ঝড়ে তাদের বসত ঘরটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় তার স্বামী ও ছোট নাতিন বের হতে পারলেও মনেজা ঘরের নিচে চাপা পড়েন। পরে প্রতিবেশীরা গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেন। দৌলতখান উপজেলায় ঝড়ের মধ্যে ঘর চাপা পড়ে মাইসা নামের একজন মারা গেছে বলে দৌলতখান থানার ওসি ওসি সত্য রঞ্জন খাসকেল জানান।
আর বোরহান উদ্দিন থানার ওসি মো. শাহীন ফকির বলেন, বোরহান উদ্দিন উপজেলায় ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে জাকির নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বরিশাল নগরের বহুতল ভবনের নির্মাণাধীন দেয়াল ধসে পাশের খাবার হোটেলের ওপর পড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নগরের রুপাতলী লিলি পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।মৃত দুইজন হলেন- লোকমান হোসেন ওই হোটেলের মালিক আর মোকছেদুর রহমান কর্মচারী। এছাড়া এ ঘটনায় গুরুতর আহত অপর হোটেল কর্মচারী সাকিবকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।এ সময় ওই হোটেলের মালিকসহ দুই কর্মচারী ঘুমিয়ে ছিল। তারা টিনের চাল ও দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিত্সক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। রোববার পটুয়াখালী কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের হাত থেকে ফুপুও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে জোয়ারের পানিতে ভেসে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। দুমকির নলদোয়ানি গ্রামে ঘরের ওপর গাছ পড়ে বৃদ্ধ জয়নাল হাওলাদারের মৃত্যু হয়। এছাড়া,বাউফলে পরিত্যক্ত ঘরে গাছ পড়ে করিম নামের আরেক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নাপিতখালী আশয়কেন্দ্রের যাওয়ার পথে শওকত আলী মোরল (৭০) নামের এক বৃদ্ধ মারা যান। খুলনার বটিয়াঘাটা গাওঘরা গ্রামের লাল চাঁদ (৩৬) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লায় বিদ্যালয়ে ক্লাসরত অবস্থায় পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন ভবনের ৭ তলার দেয়াল ধসে পড়ে সাইফুল ইসলাম সাগর নামে ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার নোয়াগাঁও চৌমুহনী এলাকায় নুর আইডিয়াল স্কুলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে, বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় নামের এক যুবক মারা গেছেন। গতকাল সোমবার সকালে এই ঘটনা ঘটে।
উপকূলীয় অঞ্চলে ৩ লাখ ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন
রেমালের আঘাতে উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রায় ৩ লাখ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) গ্রাহক ফিক্সড ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত আছেন গত ১৪ ঘণ্টা। একইসঙ্গে প্রচণ্ড ঝড়ে ক্যাবলের ক্ষয়ক্ষতির কারণে ১০০টিরও বেশি আইএসপি অপারেটরের নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।গতকাল সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ইমারজেন্সি রেসপন্স টিমের রিপোর্টে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিটিআরসি মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপরাশেনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে গাছপালা ভেঙে পড়া, বিদ্যুৎ না থাকা এবং ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ইন্টারনেট ক্যাবলের ক্ষয়ক্ষতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর ১০০ এর অধিক আইএসপি অপারেটরের নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকার সংবাদ কর্মীরাও নেটওয়ার্কহীনতায় সংবাদ প্রেরণ করতে বেগ পান।
রেমালের তাণ্ডবে ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি এ কথা জানান।
তিনি জানান, ১৯ জেলায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর এক লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে অতিদ্রুত তাদের সহায়তা দেওয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত মোট ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খুলনায় একজন, সাতক্ষীরায় একজন, বরিশালে তিনজন, পটুয়াখালীতে একজন, ভোলায় তিনজন, চট্টগ্রামে একজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ঘর, গাছ ও দেয়াল চাপা এবং পানিতে ডুবে এদের মৃত্যু হয়েছে। আর মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪।ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি এবং আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাসমূহে নয় হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আট লাখের বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছে। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬টি। দুর্গত লোকজনকে চিকিৎসা সেবা দিতে মোট এক হাজার ৪৭১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে চালু আছে এক হাজার ৪০০ টিম।
প্রতিমন্ত্রী জানান, দুর্যোগকবলিত মানুষের সাহায্যে আমরা ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১৫টি জেলায় জিআর (ক্যাশ) তিন কোটি ৮৫ লাখ নগদ টাকা, পাঁচ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য এক কোটি ৫০ লাখ, গো খাদ্য ক্রয়ের জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এর ফলে বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রতিমন্ত্রী জানান, রোববার সন্ধ্যা থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হানে যার প্রভাব দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় আজও অব্যাহত রয়েছে। রিমালের কারণে উপকূলীয় এলাকাসমুহে পানি ঢুকে মানুষের স্বাভাবিক জনজীবনকে ব্যাহত করেছে। বেশ কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশব্যাপী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সরকারের সব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দুর্যোগপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি এখন দুর্যোগ পরবর্তী কর্মকাল চালিয়ে যাচ্ছি।
ঢাকায় ৮ ঘণ্টায় ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি, ভোগান্তিতে নগরবাসী
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রমুখ গতকাল বিকালে রাজধানীর ওপর দিয়ে অতিক্রম করে। তার আগে ভোর রবিবার রাত থেকেই দমকা হাওয়াসহ থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল দিনের বেলা বৃষ্টির মাত্রা বাড়ে। বিকালে ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি হয়। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, গতকাল ভোর থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৮ ঘন্টায় রাজধানীতে ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে ভোর ৭ টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এভাবে সন্ধ্যার পর বৃষ্টি আরো বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, রেমালের প্রভাবে সারাদেশে হালকা থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর ঢাকাতেও। রাজধানীতে ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে এই বৃস্টি এবং ঝড়ে রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে। এতে মিরপুর, উত্তরা, কুর্মিটোলা, বারিধারা ও মোহাম্মদপুরে গাছ উপড়ে পড়া এবং কিছু জায়গায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ার খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতার সৃস্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। এদিকে টানা বৃষ্টির ফলে রাজধানীতে গরম কমলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। ভোর থেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজে বের হয়েছেন অনেকে।
এছাড়া খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা জোনের ৬১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে অর্ধলক্ষাধিক মাছের ঘের। দেড় লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।বুক চিতিয়ে ঝড়ের প্রলয়ংকরী তাণ্ডবের উন্মত্তা খাটো করে দেয়া সুন্দরবন ১০ ফুট পানির নীচে তলিয়ে গেছে। হরিণসহ অনেক প্রাণীর লাশ ভাসছে সুন্দরবনের নদনদীর পানিতে। রবিবার রাত পৌনে নয়টার দিকে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাগেরহাটের মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পটুয়াখালীর খেপুপাডা উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র আঘাত হানতে শুরু করে। ৪০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের এই ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসাত্মক তাণ্ডব ছিল ২০০৭ সালের সিডারের পরে সর্বোচ্চ। ধীরে ধীরে দীর্ঘক্ষণ ধরে ঝড়টি স্থলভাগে উঠে আসার অগ্র-পশ্চাতে মধ্যরাতে ঘূর্নিতান্ডবের সাথে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুরের বেশ বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে জানান,ঝড়টি স্থলভাগে উঠে তাণ্ডব চালানোর পর অনেকটা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে ঢাকায় আরও বৃষ্টি হবে। সেই সাথে ঝোড়ো বাতাস বইবে। ঢাকার ওপর দিয়ে এটা পর্যায়ক্রমে সিলেট দিয়ে বাংলাদেশের বাইরে যাবে। বিকালের ঝড়ের কেন্দ্রাংশ ঢাকায় প্রবেশ করে। ঢাকায় বৃষ্টিপাত আর দমকা বাতাস বেড়েছে।
আজিজুর রহমান বলেন, রেমাল রবিবার সারা রাত তাণ্ডব চালিয়েছে। এর অগ্রভাগ গতকাল দুপুরে উপকূলে আসে। মধ্যরাতে কেন্দ্র ওপরে উঠে আসে। এরপর ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা ধরে সে পুরোটা ওপরে উঠে আসে। ৬টার আগেই উপকূলে উঠে আসে। এখন সাইক্লোন থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাব যশোরে আছে এরপর ঢাকায় আসবে। বাতাস ২০ থেকে ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকবে। এর চেয়ে আর বাড়ার সুযোগ নাই। এটি উপকূলের পুরোটা অংশ পেয়েছে। এটি আজ বৃষ্টিঝড়ে মধ্যে আরও দুর্বল হবে। এরপর নিম্নচাপ আকারে আসামের দিকে চলে যাবে। পরিচালক জানান, ঝড়ের সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়াতে ১১১ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। রাত ১টা ৩০ মিনিটে এটা রেকর্ড করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামে ২০৩ মিলিমিটার।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সাত জেলায় ১২ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে পটুয়াখালীতে ৩, সাতক্ষীরায় ১, ভোলায় ৩, চট্টগ্রাম ১, কুমিল্লা ১, বরিশালে ২ এবং খুলনায় ১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।এর মধ্যে ভোলায় রেমালের তাণ্ডবের মধ্যে গাছ-ঘরচাপায় নারী ও শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার ভোররাতের দিকে লালমোহন, দৌলতখান ও বোরহান উদ্দিন উপজেলায় তাদের মৃত্যু হয় বলে থানার পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নিহতরা হলেন- লালমোহন উপজেলার মনেজা খাতুন (৫৫), দৌলতখান উপজেলার মাইসা (৪) ও বোরহান উদ্দিন উপজেলার জাকির (৫০)। লালমোহন থানার ওসি এসএম মাহবুব উল আলম জানান। ঘূর্ণিঝড়ে ঘরের নিচে চাপা পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মো. হান্নান বলেন,মনেজা খাতুন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এ সময় তার স্বামী ও ৫-৭ বছর বয়সী নাতিনও তার সঙ্গে একই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোর রাত ৪টার দিকে তীব্র ঝড়ে তাদের বসত ঘরটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় তার স্বামী ও ছোট নাতিন বের হতে পারলেও মনেজা ঘরের নিচে চাপা পড়েন। পরে প্রতিবেশীরা গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেন। দৌলতখান উপজেলায় ঝড়ের মধ্যে ঘর চাপা পড়ে মাইসা নামের একজন মারা গেছে বলে দৌলতখান থানার ওসি ওসি সত্য রঞ্জন খাসকেল জানান।
আর বোরহান উদ্দিন থানার ওসি মো. শাহীন ফকির বলেন, বোরহান উদ্দিন উপজেলায় ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে জাকির নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বরিশাল নগরের বহুতল ভবনের নির্মাণাধীন দেয়াল ধসে পাশের খাবার হোটেলের ওপর পড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নগরের রুপাতলী লিলি পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।মৃত দুইজন হলেন- লোকমান হোসেন ওই হোটেলের মালিক আর মোকছেদুর রহমান কর্মচারী। এছাড়া এ ঘটনায় গুরুতর আহত অপর হোটেল কর্মচারী সাকিবকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।এ সময় ওই হোটেলের মালিকসহ দুই কর্মচারী ঘুমিয়ে ছিল। তারা টিনের চাল ও দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিত্সক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। রোববার পটুয়াখালী কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের হাত থেকে ফুপুও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে জোয়ারের পানিতে ভেসে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। দুমকির নলদোয়ানি গ্রামে ঘরের ওপর গাছ পড়ে বৃদ্ধ জয়নাল হাওলাদারের মৃত্যু হয়। এছাড়া,বাউফলে পরিত্যক্ত ঘরে গাছ পড়ে করিম নামের আরেক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নাপিতখালী আশয়কেন্দ্রের যাওয়ার পথে শওকত আলী মোরল (৭০) নামের এক বৃদ্ধ মারা যান। খুলনার বটিয়াঘাটা গাওঘরা গ্রামের লাল চাঁদ (৩৬) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লায় বিদ্যালয়ে ক্লাসরত অবস্থায় পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন ভবনের ৭ তলার দেয়াল ধসে পড়ে সাইফুল ইসলাম সাগর নামে ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার নোয়াগাঁও চৌমুহনী এলাকায় নুর আইডিয়াল স্কুলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে, বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় নামের এক যুবক মারা গেছেন। গতকাল সোমবার সকালে এই ঘটনা ঘটে।
উপকূলীয় অঞ্চলে ৩ লাখ ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন
রেমালের আঘাতে উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রায় ৩ লাখ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) গ্রাহক ফিক্সড ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত আছেন গত ১৪ ঘণ্টা। একইসঙ্গে প্রচণ্ড ঝড়ে ক্যাবলের ক্ষয়ক্ষতির কারণে ১০০টিরও বেশি আইএসপি অপারেটরের নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।গতকাল সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ইমারজেন্সি রেসপন্স টিমের রিপোর্টে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিটিআরসি মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপরাশেনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে গাছপালা ভেঙে পড়া, বিদ্যুৎ না থাকা এবং ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ইন্টারনেট ক্যাবলের ক্ষয়ক্ষতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর ১০০ এর অধিক আইএসপি অপারেটরের নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকার সংবাদ কর্মীরাও নেটওয়ার্কহীনতায় সংবাদ প্রেরণ করতে বেগ পান।
রেমালের তাণ্ডবে ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি এ কথা জানান।
তিনি জানান, ১৯ জেলায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর এক লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে অতিদ্রুত তাদের সহায়তা দেওয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত মোট ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খুলনায় একজন, সাতক্ষীরায় একজন, বরিশালে তিনজন, পটুয়াখালীতে একজন, ভোলায় তিনজন, চট্টগ্রামে একজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ঘর, গাছ ও দেয়াল চাপা এবং পানিতে ডুবে এদের মৃত্যু হয়েছে। আর মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪।ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি এবং আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাসমূহে নয় হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আট লাখের বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছে। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬টি। দুর্গত লোকজনকে চিকিৎসা সেবা দিতে মোট এক হাজার ৪৭১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে চালু আছে এক হাজার ৪০০ টিম।
প্রতিমন্ত্রী জানান, দুর্যোগকবলিত মানুষের সাহায্যে আমরা ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১৫টি জেলায় জিআর (ক্যাশ) তিন কোটি ৮৫ লাখ নগদ টাকা, পাঁচ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য এক কোটি ৫০ লাখ, গো খাদ্য ক্রয়ের জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এর ফলে বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রতিমন্ত্রী জানান, রোববার সন্ধ্যা থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হানে যার প্রভাব দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় আজও অব্যাহত রয়েছে। রিমালের কারণে উপকূলীয় এলাকাসমুহে পানি ঢুকে মানুষের স্বাভাবিক জনজীবনকে ব্যাহত করেছে। বেশ কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশব্যাপী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সরকারের সব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দুর্যোগপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি এখন দুর্যোগ পরবর্তী কর্মকাল চালিয়ে যাচ্ছি।
ঢাকায় ৮ ঘণ্টায় ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি, ভোগান্তিতে নগরবাসী
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রমুখ গতকাল বিকালে রাজধানীর ওপর দিয়ে অতিক্রম করে। তার আগে ভোর রবিবার রাত থেকেই দমকা হাওয়াসহ থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল দিনের বেলা বৃষ্টির মাত্রা বাড়ে। বিকালে ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি হয়। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, গতকাল ভোর থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৮ ঘন্টায় রাজধানীতে ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে ভোর ৭ টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এভাবে সন্ধ্যার পর বৃষ্টি আরো বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, রেমালের প্রভাবে সারাদেশে হালকা থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর ঢাকাতেও। রাজধানীতে ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে এই বৃস্টি এবং ঝড়ে রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে। এতে মিরপুর, উত্তরা, কুর্মিটোলা, বারিধারা ও মোহাম্মদপুরে গাছ উপড়ে পড়া এবং কিছু জায়গায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ার খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতার সৃস্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। এদিকে টানা বৃষ্টির ফলে রাজধানীতে গরম কমলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। ভোর থেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজে বের হয়েছেন অনেকে।