১৪ বছরের ইয়ামিন কামরাঙ্গীরচর খোলামোড়া গুদারাঘাট লেগুনা স্ট্যান্ডের একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক। প্রখর রোদের মধ্যে পলেস্টার কাপড়ে হাঁটুর নিচে পর্যন্ত পাঞ্জাবি পরে সিএনজি থামিয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিল সে। এ সময় কথা হয় ইয়ামিনের সঙ্গে।
ইয়ামিন জানায়, সে কুমিল্লার গৌরীপুরের সিংগুলা হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এখন মাদ্রাসা বন্ধ, তাই সে এবং তার বড় ভাই কুরআনে হাফেজ ১৫ বছরের ইয়াসিন পালা করে বাবার সিএনজি চালাচ্ছে। বাবা-মা আর তিন ভাইয়ের সংসারে বাবা প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। তখন তাদের সিএনজি চালাতে হয়। যদিও তাদের সিএনজি চালানোর বয়স ও লাইসেন্স কোনোটাই নেই।
স্থানীয়রা জানান, শুধু ইয়াসিন আর ইয়ামিন নয়, এই লেগুনা স্ট্যান্ডে অনেক শিশুই সিএনজি, লেগুনা এবং অটোরিকশা চালক। ১০০ জন চালকের মধ্যে কত জন শিশু অর্থাত্ কত জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে হবে—এমন প্রশ্নে তারা উত্তর দেন ৪০/৫০ জনের কম না, বেশিও হতে পারে। এমন বাস্তবতার মধ্যে আজ ১২ জুন ‘শিশুশ্রম বন্ধ করি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি’ প্রতিপাদ্য করে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস।
বাংলাদেশ ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম প্রতিরোধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বিজ্ঞজনেরা বলছেন, শিশুশ্রম প্রতিরোধে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করে সঠিক তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। শিশুরা যে পারিশ্রমিক পায় তা পরিবারকে দিয়ে তাদের স্কুলে পুনর্বাসনসহ কারিগরি শিক্ষায় যুক্ত করতে হবে। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে না হলেও ২০২৬ সালের শেষের দিকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ করা সম্ভব হবে।
আরো কয়েক জন শিশু অটোরিকশা চালকের কথা : মো. সুজনের বয়স ১৭ বছর। পাঁচ বছর আগে সে অটোরিকশা চালানো শুরু করে। কিশোরগঞ্জ থেকে আসা সুজন বলে, তার বাবা মারা গেছে। সংসার চালাতে তাকে কাজে নামতে হয়। দরিদ্র পরিবার বলে তার পড়াশুনাও হয়নি। মো. ইয়াহিয়ার বয়স ১৬ বছর, আট মাস হলো সে অটোরিকশা চালায়। এর আগে সে একটি হোটেলে কাজ করেছে। সে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। প্রতিদিন কত আয় হয়, জানতে চাইলে জানায়, জমা দিয়ে ৪০০/৫০০ টাকা আয় হয়। আরিফের বয়স ১৮ বছর, সে চার বছর ধরে অটো চালায়। তার কোনো লাইসেন্স আছে কি না জানতে চাইলে বলে, ‘এই স্ট্যান্ডের কোনো ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই।’ কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে কি না প্রশ্ন করলে বলে, ‘বড় কোনো দুর্ঘটনা এখনো হয়নি।’
গুদারাঘাট লেগুনা স্ট্যান্ডের চা-দোকানদার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গরিব ছেলেরা অভাবের জন্য কাজ করছে। এখানে অনেক কারখানায় আর অটোরিকশায় অনেক শিশু শ্রমিক কাজ করে। আবুল হোসেন গুদারাঘাট থেকে মাতবর বাজার যাচ্ছেন শিশু চালকের অটোরিকশায়। তিনি বলেন, কাজ করা খারাপ না তবে এত রোদে গরমে কাজ করা কষ্টের। আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ক ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় পরিবহন খাতে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত ১ হাজার ৫৩ শ্রমিকের মধ্যে ৫১৩ জনই ছিল পরিবহন খাতের। অর্থাত কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর অর্ধেকই পরিবহন খাতের শ্রমিক।
দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছেই : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শেষ জরিপ মতে, গত ১০ বছরে দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ৭৭ হাজার। ২০২৩ সালে প্রকাশিত জরিপ বলছে, শ্রমে আছে ১৭ লাখ ৭৬ হাজার শিশু (যাদের বয়স ৫ থেকে ১৪ বছর)। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালে ছিল ১৬ লাখ ৯৮ হাজার।
দেশে শিশুশ্রম প্রতিরোধ মনিটরিং কমিটির কো-চেয়ার অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, এই শিশুরা যে শুধু ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে, তা না। তারা যোগ্য পারিশ্রমিকও পাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা দেখছি দেশে শিশুশ্রম বেড়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিশুরা কেন কাজ করে সেই অভাব দূর করতে হবে। পরিবারের সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ, স্কুলে পুনর্বাসন এবং শিশুদের জন্য কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সঠিকভাবে পরিদর্শন করে সঠিক তথ্য উপাত্ত প্রকাশের ওপরও জোর দেন তিনি।
এ ব্যাপারে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সহকারী মহাপরিদর্শক (সেইফটি) এস এম শাহাজাদ কবির বলেন, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক দুই খাতে কাজ করার দায়িত্ব। তবে লোকবলের অভাবে আমরা এখনো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে হাত দিতে পারিনি।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রিমি) বলেন, শিশুশ্রম শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিষয়। শিশুশ্রম প্রতিরোধে সরকার সামাজিক নিরাপত্তার পরিধি বাড়িয়েছে, জেলা ও গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতা ও প্রচারণা বাড়িয়েছে বলে তিনি জানান।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এম ইব্রাহিম এমপি বলেন, সরকার শিশুশ্রম অনেক কমিয়ে এনেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ সম্ভব না হলেও ২০২৬ সালের মধ্যে তা বন্ধ হবে। যেখানে যেখানে শিশুশ্রম হচ্ছে সেখানে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
ইয়ামিন জানায়, সে কুমিল্লার গৌরীপুরের সিংগুলা হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এখন মাদ্রাসা বন্ধ, তাই সে এবং তার বড় ভাই কুরআনে হাফেজ ১৫ বছরের ইয়াসিন পালা করে বাবার সিএনজি চালাচ্ছে। বাবা-মা আর তিন ভাইয়ের সংসারে বাবা প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। তখন তাদের সিএনজি চালাতে হয়। যদিও তাদের সিএনজি চালানোর বয়স ও লাইসেন্স কোনোটাই নেই।
স্থানীয়রা জানান, শুধু ইয়াসিন আর ইয়ামিন নয়, এই লেগুনা স্ট্যান্ডে অনেক শিশুই সিএনজি, লেগুনা এবং অটোরিকশা চালক। ১০০ জন চালকের মধ্যে কত জন শিশু অর্থাত্ কত জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে হবে—এমন প্রশ্নে তারা উত্তর দেন ৪০/৫০ জনের কম না, বেশিও হতে পারে। এমন বাস্তবতার মধ্যে আজ ১২ জুন ‘শিশুশ্রম বন্ধ করি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি’ প্রতিপাদ্য করে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস।
বাংলাদেশ ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম প্রতিরোধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বিজ্ঞজনেরা বলছেন, শিশুশ্রম প্রতিরোধে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করে সঠিক তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। শিশুরা যে পারিশ্রমিক পায় তা পরিবারকে দিয়ে তাদের স্কুলে পুনর্বাসনসহ কারিগরি শিক্ষায় যুক্ত করতে হবে। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে না হলেও ২০২৬ সালের শেষের দিকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ করা সম্ভব হবে।
আরো কয়েক জন শিশু অটোরিকশা চালকের কথা : মো. সুজনের বয়স ১৭ বছর। পাঁচ বছর আগে সে অটোরিকশা চালানো শুরু করে। কিশোরগঞ্জ থেকে আসা সুজন বলে, তার বাবা মারা গেছে। সংসার চালাতে তাকে কাজে নামতে হয়। দরিদ্র পরিবার বলে তার পড়াশুনাও হয়নি। মো. ইয়াহিয়ার বয়স ১৬ বছর, আট মাস হলো সে অটোরিকশা চালায়। এর আগে সে একটি হোটেলে কাজ করেছে। সে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। প্রতিদিন কত আয় হয়, জানতে চাইলে জানায়, জমা দিয়ে ৪০০/৫০০ টাকা আয় হয়। আরিফের বয়স ১৮ বছর, সে চার বছর ধরে অটো চালায়। তার কোনো লাইসেন্স আছে কি না জানতে চাইলে বলে, ‘এই স্ট্যান্ডের কোনো ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই।’ কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে কি না প্রশ্ন করলে বলে, ‘বড় কোনো দুর্ঘটনা এখনো হয়নি।’
গুদারাঘাট লেগুনা স্ট্যান্ডের চা-দোকানদার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গরিব ছেলেরা অভাবের জন্য কাজ করছে। এখানে অনেক কারখানায় আর অটোরিকশায় অনেক শিশু শ্রমিক কাজ করে। আবুল হোসেন গুদারাঘাট থেকে মাতবর বাজার যাচ্ছেন শিশু চালকের অটোরিকশায়। তিনি বলেন, কাজ করা খারাপ না তবে এত রোদে গরমে কাজ করা কষ্টের। আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ক ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় পরিবহন খাতে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত ১ হাজার ৫৩ শ্রমিকের মধ্যে ৫১৩ জনই ছিল পরিবহন খাতের। অর্থাত কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর অর্ধেকই পরিবহন খাতের শ্রমিক।
দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছেই : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শেষ জরিপ মতে, গত ১০ বছরে দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ৭৭ হাজার। ২০২৩ সালে প্রকাশিত জরিপ বলছে, শ্রমে আছে ১৭ লাখ ৭৬ হাজার শিশু (যাদের বয়স ৫ থেকে ১৪ বছর)। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালে ছিল ১৬ লাখ ৯৮ হাজার।
দেশে শিশুশ্রম প্রতিরোধ মনিটরিং কমিটির কো-চেয়ার অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, এই শিশুরা যে শুধু ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে, তা না। তারা যোগ্য পারিশ্রমিকও পাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা দেখছি দেশে শিশুশ্রম বেড়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিশুরা কেন কাজ করে সেই অভাব দূর করতে হবে। পরিবারের সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ, স্কুলে পুনর্বাসন এবং শিশুদের জন্য কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সঠিকভাবে পরিদর্শন করে সঠিক তথ্য উপাত্ত প্রকাশের ওপরও জোর দেন তিনি।
এ ব্যাপারে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সহকারী মহাপরিদর্শক (সেইফটি) এস এম শাহাজাদ কবির বলেন, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক দুই খাতে কাজ করার দায়িত্ব। তবে লোকবলের অভাবে আমরা এখনো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে হাত দিতে পারিনি।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রিমি) বলেন, শিশুশ্রম শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিষয়। শিশুশ্রম প্রতিরোধে সরকার সামাজিক নিরাপত্তার পরিধি বাড়িয়েছে, জেলা ও গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতা ও প্রচারণা বাড়িয়েছে বলে তিনি জানান।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এম ইব্রাহিম এমপি বলেন, সরকার শিশুশ্রম অনেক কমিয়ে এনেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ সম্ভব না হলেও ২০২৬ সালের মধ্যে তা বন্ধ হবে। যেখানে যেখানে শিশুশ্রম হচ্ছে সেখানে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।